মাছ ও সবজির দাম হঠাৎ চড়া
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। এর মধ্যে হঠাৎ করেই বেড়েছে মাছ ও সবজির দাম। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে বাজারে ফের দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের সংকট। অনেক দোকানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষ হলেও এতদিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমের মতো শীতকালীন সবজির সরবরাহ ছিল। এখন সরবরাহ কমে গেছে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহও সেভাবে বাড়েনি। তাই বাজার অনেকটাই চড়া।
সরেজমিন গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো সবজির দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজি ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কচুর লতি ১০০ টাকা, বেগুন ৯০ টাকা, করলা, পটোল, বরবটি ৮০ টাকা। শিম, ঢেড়স, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও পেঁপে ৫০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। শসা ও গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। শজনে ডাঁটা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি ৩০ টাকা।
যাত্রাবাড়ী বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী মীর মোহাম্মদ বলেন, এবার রমজান মাসে কম দামে সবজি কিনতে পেরেছি। এখন হঠাৎ করে যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে এক-দুই পদের সবজি কিনতেই পকেটে টান পড়ছে। যেটাতেই হাত দিচ্ছি ৬০ টাকা-৮০ টাকা।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সবজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কারওয়ান বাজারের মেসার্স রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলরাম চন্দ্র বলেন, কাঁচা পণ্য হওয়ায় সবজির বাজার প্রতিদিন ওঠানামা করে। এখন অনেক সবজির মৌসুম শেষ। গ্রীষ্মকালীন সবজি কেবল উঠতে শুরু করেছে। তাই বাজারে এখন সবজি কম। দামেও এর প্রভাব পড়েছে।
এদিকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে অনেকের বাসায় ইলিশসহ মাছের নানা আয়োজন থাকে। এখন পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছের দামও বেড়ে চলেছে। বাজারে সেভাবে দেখা না মিললেও যে কয়েকটি দোকানে বরফে রাখা ইলিশের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে অত্যন্ত চড়া দামে তা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা, ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ছোট ইলিশের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ৪০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।
অন্য মাছের দাম শুনেও ঘাম ঝরছে ক্রেতার। পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, মলা, রুইসহ বেশির ভাগ মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে। বড় আকৃতির রুইমাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আর মাঝারি সাইজের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। পুঁটি মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। চিংড়ির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাষের চিংড়ি হলে কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। টেংরার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ ছাড়া শিং ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়াও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এদিকে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আদা ও রসুনের দাম অপরিবর্তিত। আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
এদিকে বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। আগের মতো অনেক দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও ২ লিটারের বোতাল আছে তো ৫ লিটারের বোতল নাই। খুচরো বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি থেকে আবারও তেল দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ঈদের পর থেকে নতুন অর্ডার নিচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুই দফা বৈঠকের পরও দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ২৭ মার্চ ট্যারিফ কমিশনে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা হবে বলে জানায় পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন। তবে দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের অনুমতি এখনও মেলেনি।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম