আলু এখন কৃষকের গলার কাঁটা
দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জ। এ বছর দারুণ ফলনের পর আলুর দামও কম। দাম কম হওয়ায় এ বছর উৎপাদন খরচ পুষিয়ে উঠতে পারবেন না কৃষককুল। অন্যদিকে হিমাগার সংকটের কারণে সংরক্ষণও করতে পারছেন না। সিন্ডিকেটের কব্জায় হিমাগারগুলোতে চাষিরা আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। সব মিলিয়ে উৎপাদিত আলু এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার জেলার ছয়টি উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আলু উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার ৬৯ মেট্রিক টন বেশি।
এদিকে জেলায় আলু সংরক্ষণের হিমাগার রয়েছে মাত্র ৭৪টি। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮টি। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে সর্বসাকুল্যে প্রায় ৫ লাখ টন। এর মধ্যে আবার জেলার বাইরে থেকে ২৫ শতাংশ আলু সংরক্ষণ করা হয়। কাজেই এ বছর মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তাই ওই আলু বিকল্প পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় সংরক্ষণ করতে হচ্ছে কৃষকদেরকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। অর্জন হয় ৩৪ হাজার ৫৫ হেক্টর। এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর।
চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক জানানÑ তাদের উৎপাদিত হাজার হাজার টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করার জায়গা পাচ্ছে না। তাই অগত্যা জমিতে স্তূপাকারে আলু ফেলে রেখেছেন। আবার ঘরের উঠানে মাচায় আলু সংরক্ষণ করছেন। এরপরও অনেক আলু ঘরে-বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
সদরের মহাকালী, চরাঞ্চলের শিলই, বাংলাবাজার ইউনিয়নের কৃষকদের উৎপাদিত আলু নিয়েও একই ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া জেলার সিরাজদীখান, শ্রীনগর, লৌহজং ও গজারিয়া উপজেলায় উৎপাদিত আলু নিয়েও কৃষকরা বিপাকে রয়েছেন।
সদরের চরাঞ্চলের কৃষক জাকির বেপারি বলেন, প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা করে খরচ পড়েছে। বিক্রি করা হচ্ছে ১২ টাকা কেজি। প্রতি কেজিতে লোকসান ৮ টাকা। কিছু আলু হিমাগারে রেখেছি। সেখানে প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে সংরক্ষণ করেছি।
কৃষক সায়েদ দেওয়ান বলেন, হিমাগারে আলু উত্তোলনের আগেই কোঠা বিক্রি হয়ে যায়। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আগেই হিমাগারের কোঠা কিনে ফেলেন। ওই সব কোঠা বেশি দামে আমাদের কিনতে হয়। এতে আলু সংরক্ষণে আরও বেশি টাকা গুনতে হয়, যা সব কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না।
সিরাজদীখান উপজেলার চন্দনধুল গ্রামের কৃষক স্বপন মৃধা বলেন, হিমাগারে ঘুষ দিয়ে কিছু আলু রেখেছি। বাকি ২ হাজার মণ আলু দেশিও পদ্ধতিতে
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাড়িতে (গোলা) রেখেছি। এবার যে পরিমাণ গরম, তাতে আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই এলাকার লতব্দী এলাকার কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, আমি ২৪৫ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছি। আমার রোপণ ও কেনা আলু মোট ৭০০ বস্তা, এর মধ্যে ৫০০ বস্তা নেপচুন কোল্ড স্টোরেজে রাখতে পেরেছি, ২০০ বস্তা আলু রাখতে পারিনি। নেপচুন কোল্ড স্টোরেজে অগ্রিম ২৩৫ টাকা প্রতি বস্তা ভাড়ায় ৭০০ বস্তার রসিদ কেটেছি, কিন্তু উত্তরবঙ্গের আলু দিয়ে হিমাগার ভরে ফেলার কারণে আমার ২০০ বস্তা রাখতে পারিনি। উল্টো হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমার রসিদ ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার মতো অনেক কৃষকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে।
হিমাগারে কোঠা রেখেছেন এমন একজন ব্যবসায়ী শুভ শাহা বলেন, ‘আমি প্রতি বছর কোঠা কিনে রাখি। পড়তা পড়লে আলু রাখি, না হয় কোঠা বিক্রি করে দিই।’ আগে কেন কোঠা রাখেনÑ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগে কোঠা রাখি হিমাগারগুলো এক সঙ্গে অগ্রিম টাকা পেয়ে যায়। আমরাও কিছু টাকা কমে পাই, এ জন্যই আগে কোঠা রাখি।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত আমাদের সময়কে বলেন, এ মৌসুমে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। জেলায় ৫৮টি হিমাগার সচল রয়েছে। এসব হিমাগারে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। এর মধ্যে ৪ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়ে গেছে। বাকি আলুগুলো স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম