ভারতের ওয়াকফ আইন নিয়ে যা জানাল বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১০
শেয়ার :
ভারতের ওয়াকফ আইন নিয়ে যা জানাল বিএনপি

‘মুসলিম ওয়াক্ফ (সংশোধন) বিল ২০২৫’ নামে একটি আইন পাস করেছে ভারত। মুসলমানদের অধিকার খর্ব করতেই এই আইন পাস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

আজ রবিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে ভারতের পার্লামেন্টে “মুসলিম ওয়াক্ফ (সংশোধন) বিল ২০২৫” নামে একটি আইন পাস করা হয়। আইনটির বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি যে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার খর্ব করা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে এই আইনে।’

ভারতে মুসলমানরা ও বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এই বিলকে অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ওয়াক্ফ হলো ইসলামি দানের একটি প্রাচীন ব্যবস্থা। ওয়াকফের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি স্থায়ীভাবে সাধারণত জমির মতো কোনো সম্পত্তি ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেন। এ ধরনের ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রি করা বা কারও নামে হস্তান্তর করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতি ও স্বার্থবিরোধী এই আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভারতে ওয়াক্ফ বোর্ডগুলোর অধীনে প্রায় ১০ লাখ একর সম্পত্তির মধ্যে অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণ মূলক কাজে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নতুন আইনে পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যার ফলে মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপের কারণে এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে—এ রকম কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গ্রহণ করা সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘ভারতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের এই জাতীয় বোর্ডে অথবা কোনো আইনি সংগঠনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে এই আইনটি একটি বৈষম্যমূলক আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুন আইনে পরিবর্তনগুলো শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ জমির ওপর গড়া মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন আইনে অমুসলিম সদস্যদের এই সম্পত্তিগুলোর ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যে এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে, তা মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।’

সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল “ল” বোর্ডের মতো সংগঠনগুলোর মতে—এই আইন ইসলামি ওয়াক্ফ ব্যবস্থার মূল চেতনার পরিপন্থী। তাদের মতে, ওয়াক্ফ বোর্ডের পরিচালনা মুসলমানদের দ্বারাই হওয়া উচিত। তারা একে মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল বলে অভিমত দিয়েছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের ভূমিকাকে সমুন্নত রেখে উক্ত আইনটি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে, আমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।’