শেষ দিনেও বেতন-বোনাস দেয়নি অনেক কারখানা
শিল্পকারখানাগুলোতে গতকাল শনিবার ২৯ মার্চ ছিল শেষ কর্মদিবস। শ্রমিকরা আশায় ছিল অন্তত শেষ দিনে তাদের শ্রমের মূল্য পাবেন, যা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। কিন্তু সবার ভাগ্যে তা আর জুটল না। ফলে অনেকে পোশাক শ্রমিকই শূন্য হাতে ঈদ কাটাবেন। তবে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, এর সদস্যভুক্ত ২ হাজার ১০৭টি কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৯৮টি অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ কারখানা ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে। সংগঠনটি বলছে, এ ছাড়া মার্চ মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ কারখানা। আর ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ কারখানা।
এদিকে গতকাল তোপের মুখে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের জন্য ঈদের আগে দুই কোটি টাকার জায়গায় এক কোটি বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শ্রম সচিব। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ৮ এপ্রিল শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবেন বলে জানান তিনি।
শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় শ্রম ভবনের সামনে শ্রম সচিব এ ঘোষণা দেন। এর আগে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন মালিকপক্ষ মেশিন বিক্রি করে দুই কোটি টাকা দেবে। বৈঠকের পর প্রায় আধা ঘণ্টা শ্রম ভবনে অবরুদ্ধ থাকার পর শ্রমিক নেতাদের আশ্বাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় নিচে নেমে আসেন তিনি। এ সময় গাড়িতে উঠতে চাইলে শ্রমিকরা তাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি মোট তিন কোটি টাকা পরিশোধের কথা জানান। তাও মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিক নেতারা সচিবকে গাড়িতে উঠিয়ে দেন।
ঘোষণায় শ্রম সচিব মে দিবসের আগেই বকেয়াসহ সব সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়া সে পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের ডিরেক্টর শাহীনসহ তিন কর্মকর্তা থাকবেন শ্রম অধিদপ্তরের হেফাজতে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
পরবর্তী সময়ে অ্যাপারেল প্লাস ইকোর শ্রমিক প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেই সব টাকা পরিশোধ করতে হবে। কারণ আমাদের ১৭ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে তিন কোটি টাকা নিলেও শ্রমিকদের কোনো কাজে আসবে না। কারণ তিন মাস বেতন না পাওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে দেনার দায়ে জর্জরিত। তাই ঈদের আগে অন্তত একটি বেতন ও একটি বোনাস না দিলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
পুরো বকেয়া পরিশোধ না করলে আজকের পর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ঈদের দিনেও শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করার ঘোষণা দেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
ঈদের আগে বেতন-ভাতা অনিশ্চিত ১৭০০ শ্রমিকের : পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বন্ধ করে দেয় ঢাকার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার পোশাক কারখানা ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানাটি লে-অফ (বন্ধ) ঘোষণা করা হয়। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনের বেতনসহ ঈদের বোনাস ২৫ মার্চ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই দিন ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ দিনের বেতন দিয়ে শ্রমিকদের আর কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন জানান, কারখানাটিতে ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক রয়েছেন। এসব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় শ্রমিক, মালিকপক্ষসহ বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে ১৭ মার্চ সভা হয়। এতে ২৫ মার্চ শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারিসহ ১৫ মার্চ পর্যন্ত বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়ার বিষয়ে লিখিত চুক্তি হয়। কিন্তু ২৫ মার্চ শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ দিনের বেতন দেওয়া হয়।
শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার : অন্যদিকে শিল্প পুলিশ বলছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএ-সহ অন্যান্য সংগঠনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রায় সবাই পরিশোধ করেছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহযোগিতা ও আন্তরিক নিষ্ঠা ও নিবিড় তদারকিতে এবারের ঈদের বোনাস ও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধে শিল্প-সেক্টরে শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে।
শিল্প পুলিশ জানায়, টিএনজেডসহ কিছু কারখানা বোনাসসহ বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। কিন্তু বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বোনাস পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, এখন শিল্প পুলিশের সদস্যরা পুলিশিং কার্যক্রম হিসাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সচল রাখার কাজ করছে এবং জেলা পুলিশের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করছে। ঈদের ছুটি চলাকালীন শিল্প এলাকায়, বিশেষ করে শ্রমঘন এলাকার আবাসিক এলাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থিত কারখানার আশপাশে রাত্রিকালীন টহল ডিউটি জোরদার করা হয়েছে। ছুটিকালীন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং চুরি-ডাকাতি ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।