প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ফিডিংয়ে থাকবে দুধ-ডিম-ফল

এম এইচ রবিন
৩০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ফিডিংয়ে থাকবে দুধ-ডিম-ফল

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত উপস্থিতি, ঝরে পড়া রোধ, যথাসময়ে শিক্ষাচক্র শেষ করার লক্ষ্যে ফের চালু হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফিডিং কর্মসূচি। দারিদ্র্যকবলিত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি ২০১০ সালে চালু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। এবার নতুন করে চালু হলে আগের খিচুড়ির পরিবর্তে শিশুদের দুপুরের খাবার হবে দুধ, ডিম এবং মৌসুমি ফল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকল্পটি আগামী এপ্রিল মাস থেকে চালু করতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, এপ্রিলেই চালু হচ্ছে ফিডিং কর্মসূচি। ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এ কর্মসূচির আওতায় আসছে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ও ঝরে পড়া রোধে সপ্তাহের পাঁচ দিন দুপুরের খাবার দিতে সরকার এ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসে। অন্যদিকে অবস্থাপন্ন শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনে পড়িয়ে থাকেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা প্রান্তিক শিশুরা অনেকেই দারিদ্র্যের কারণে কিংবা অসচেতনতায় বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে। তারা যেসব খাবার খায় তাও পুষ্টিসমৃদ্ধ হয় না অনেক সময়। শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকায় লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারে না। আবার হয়তো তাদের পরিবারের পুষ্টিকর খাবার কেনারও সামর্থ্য থাকে না। সরকার এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রান্তিক পর্যায়ের সব উপজেলার স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে চালু হওয়া প্রকল্পটি দেশের ১০৪টি উপজেলায় পরিচালিত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতো কয়েকটি সংস্থা গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে বাংলাদেশে এ প্রকল্প চালাতে সমর্থন দিয়েছিল। সংস্থাগুলো বলেছে, শিক্ষাসংক্রান্ত সূচকগুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টি অবস্থার উন্নতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রকল্প। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি এবং ঝরে পড়া রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ৬২টি জেলার ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চলবে। ৯১ শতাংশ অর্থাৎ ১৩৫টি উপজেলা অতি উচ্চ এবং উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ। বাকি ১৪টি অর্থাৎ ৯ শতাংশ উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকবে দুধ, ডিম, রুটি (বন) এবং মৌসুমি ফল। তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে শুকনো পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিতরণের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বিবিএসের দারিদ্র্য ম্যাপ দেখে স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। স্কুলে খাবার এমনভাবে পরিবেশন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হয়।

তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে পুষ্টিসমৃদ্ধ এ খাবার পরিবেশন করা হবে। স্কুল খোলার প্রথম তিন দিন শিক্ষার্থীরা একটি করে ডিম ও বনরুটি, পরের দুই দিন পর্যায়ক্রমে ইউএইচটি দুধ ও বনরুটি এবং অন্যদিন পাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট ও যে কোনো মৌসুমি ফল। খাবারের পেছনে শিক্ষার্থী প্রতি খরচ হবে গড়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। কার্যক্রমের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি কাজ করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ প্রসঙ্গে বলেন, মিড ডে মিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুরা লম্বা সময় স্কুলে থাকে, তারা দুপুরে কিছু খাবে, ক্ষুধা দূর হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপুষ্টিতে ভোগে। এ প্রজেক্টে হেলথের কম্পোনেন্ট রয়েছে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার এবং ভাসানচরে অবস্থানরত মিয়ানমারের শিশুরাও এ প্রকল্পে যুক্ত হবে। ১ হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৯৯ জন শিক্ষক এ প্রকল্পের আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পাবেন।

ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’র খরচ কোনো বিদেশি ঋণ কিংবা অনুদান ছাড়াই নিজস্ব জোগান থেকে বহন করবে সরকার। প্রকল্পের ব্যয়ভার ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।