উৎসবের আমেজে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
উৎসবের আমেজে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

আজ ২৮ রমজান; দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে যে যেভাবে পারছে রাজধানী ছেড়ে ছুটছে গ্রামের পানে। তাদের চোখেমুখে আনন্দের ছটা। এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হয়েছে রমজানের প্রথম সপ্তাহে। আর সরকারি অফিস ছুটি হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। ছুটি দীর্ঘ হওয়াতে মানুষ ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছে। যার কারণে এবার ঈদযাত্রা আরও বেশি স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। যাত্রীদের চাপ সামলে উঠতে না পারায় ঢাকা সিটিতে চলাচল করা বিভিন্ন কোম্পানির বাসও দূরপাল্লার বাসে পরিণত হয়েছে। সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথেও চলছে স্বস্তির যাত্রা। এবার ঢাকার কমলাপুর থেকে বিভিন্ন রুটে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনে গ্রামমুখী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। অনলাইনে টিকিট কাটার সুবিধা পাওয়ায় এবার আর গভীর রাত থেকে ট্রেনের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে লঞ্চের যাত্রী আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই নৌপথে যাত্রীর চাপ আগের তুলনায় কম।

গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। দুই এক জায়গা ছাড়া কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের সবচেয়ে বড় যানজট ছিল টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পশ্চিমপাড় পর্যন্ত। গত কয়েক বছর এ সড়কের উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এবার ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ এড়াতে যমুনা সেতু পশ্চিম উত্তরের মহাসড়কে ঈদের ১০ দিন আগে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে নির্মিত ১১টি উড়ালসেতুর মধ্যে ৯টি ও হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চার লেন চালু হওয়ায় সুফল পাচ্ছে ঘরমুখী মানুষ। ফলে বিগত সময়ে তীব্র যানজট দেখা গেলেও এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই ভোগান্তিমুক্ত ও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে, বলছেন যাত্রীরা।

পদ্মা সেতু দিয়ে বাস, প্রাইভেট কারের পাশাপাশি মোটরসাইকেলের প্রচ-

ভিড় দেখা যাচ্ছে এ বছরও। হাইওয়েতে এভাবে মোটরসাইকেল চলাচল করায় দুর্ঘটনার শঙ্কাও দেখছে ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল শুক্রবার সকালে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের সারি দেখে মনে হয়েছে পুরো সেতুই যেন মোটরসাইকেলের দখলে।

বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ রুটে দৈনিক ১৮-২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদকে কেন্দ্র করে যানবাহনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সড়কটিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এবারের ঈদযাত্রায় তেমন যানজট দেখা যায়নি।

এদিন সকাল থেকেই পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের (এন-৮ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) দক্ষিণাঞ্চলগামী লেনে ছিল গণপরিবহনের ভিড়। বিরামহীনভাবে দূরপাল্লার পরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ছুটে চলছে গন্তব্যে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে শিবচর, শরীয়তপুর, ভাঙ্গাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে মহাসড়কের একাধিক স্টপেজে। ঢাকা থেকে ফিরতে মহাসড়কে যানজটের কোনো ভোগান্তি না থাকলেও বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এবার ঈদে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও বাড়তি চাপ নেই। ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। অন্যদিকে কাটা যাত্রীদের নদী পারাপার করতে নৌপথে চলছে ২০টি লঞ্চ। ফলে একসময়ের ভোগান্তির নৌপথ দিয়ে এবার স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঈদে ঘরমুখো হাজারো মানুষ।

এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটেও যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। এই ঘাটের ব্যবস্থাপক পান্না লাল নন্দী বলেন, যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও চাপ নেই। এ নৌপথে ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সদরঘাট সরগরম

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এখন বইছে যাত্রীস্রােত। গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া ও পটুয়াখালীগামী পন্টুনে ছিল বেশ ভিড়। তবে দুপুরে যাত্রীদের ভিড় কমে যায়; বিকালে আবারও বাড়তে থাকে। এদিন সব থেকে বেশি ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। ভোলা রুটের লঞ্চে যাত্রীদের ভিড়ও ছিল যথেষ্ট। বিকালে যাত্রীদের বেশির ভাগই বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেন। এদিন পটুয়াখালী ও বগা রুটেও যাত্রীর বেশ সমারোহ দেখা যায়। তবে তুলনামূলক কম যাত্রী ছিল বরিশাল রুটে।

লঞ্চসংশ্লিষ্টরা জানান, দিনের শুরুতেই পন্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতেও যাত্রীর ব্যাপক ভিড় ছিল। বরিশালগামী লঞ্চগুলোর অবস্থাও তথৈবচ।

বরিশালগামী লঞ্চ সুন্দরবন-১০ এর স্টাফ নাসিম জানান, আগে ঈদের সময় সদরঘাট থেকে বরিশালগামী প্রতিটি লঞ্চের একটি অগ্রিম টিকিট পাওয়ার জন্য যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকত। কিন্তু সে চিত্র এখন আর নেই। এখন টিকিটের কোনো বাড়তি চাপ নেই। ঘাটে এলেই টিকিট পাওয়া যায়। এখন খুব বেশি প্রয়োজন হলে যাত্রীরা ফোনে যোগাযোগ করেন।

সামাদ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, সদরঘাটে এসেছি জ্যাম ঠেলে। এ ছাড়া আর কোনো ভোগান্তি নেই। কেবিন পেতে সমস্যা হয়নি। অভিযান-৫ লঞ্চের একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছি। ভোলায় যাবেন সিলেট ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত সেনাসদস্য মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সদরঘাটের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। ঈদে পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে বাসায় যাচ্ছি।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ঘাটে ভালোই ভিড় আছে। বিশেষ লঞ্চও চলছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।