আচার-আচরণে পারস্পরিক সৌহার্দ সৃষ্টি হয়

মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
২৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আচার-আচরণে পারস্পরিক সৌহার্দ সৃষ্টি হয়

বিদায় নিচ্ছে মহান অতিথি মাহে রমজান। কড়া নাড়ছে ঈদ। মুসলমানের জাতীয় উৎসব। দীর্ঘ মাসের ইবাদতযাপনে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে মানব আত্মা। ভুলে বসেছে সব হিংসা, দ্বেষ, ধোঁকা, প্রতারণা, পরনিন্দা ও পরচর্চা। ঈদে সব একমনে, এক মাঠে, এক কাতারে। ঈদে তৈরি হয় সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও সমবেদনার উজ্জ্বল পরিবেশ। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী দুদিন খেলাধুলায় আনন্দ করে। রাসুল (স.) এই দুদিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, আমরা ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে

এই দুদিন আনন্দ করতাম। রাসুল (স.) বলেন, এই দুদিন অপেক্ষা আল্লাহ তোমাদের উত্তম দুটি দিন দান করেছেন- ১. ঈদুল ফিতর, ২. ঈদুল আজহা (আবু দাউদ)।

ঈদ ও পরবর্তী মুমিন জীবনের চিত্র উঠে এসেছে নোমান বিন বশির (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে- পারস্পরিক স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার দিক থেকে। ইমানদারদের উদাহরণ হলো একটি দেহের মতো। এর একটি অঙ্গ যদি ব্যথাপ্রাপ্ত হয়, তা হলে সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে কাতর হয়ে পড়বে (সহীহ ইবনে হিব্বান, খ.-১, পৃ.-৫৩২)।

ঈদে আমরা পরস্পর সালাম-শুভেচ্ছা বিনিময় করি, কোলাকুলি করি। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাসাবাড়িতে বেড়াতে যাই। শিশু-কিশোরদের চাঁদ দেখিয়ে আনন্দ দিই। বৃদ্ধ মুরব্বিদের দোয়া নিই। এসব আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের পরস্পর সৌহার্দ রচিত হয়; ভালোবাসার বন্ধন হয় মজবুত। প্রতিবেশীদের জন্য করণীয় সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন- ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে তৃপ্তসহকারে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে (বায়হাকি)।

কোরআন শরিফে মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ বলেছেন, মুমিন ধন-সম্পদের প্রতি ভালোবাসা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দেয় (সুরা বাকারা-১৭৭)।

ঈদ উপলক্ষে সম্পর্ক রচনার পাশাপাশি পুনঃস্থাপনও জরুরি। জীবনের কোনো বাঁকে আপনার প্রিয় মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে ধুলা জমেছে। রাগ-অভিমানে দেখা-সাক্ষাতেও কথাবার্তা হয় না। ঈদের সম্প্রীতি বুকে ধারণ করে তার বাসায় হাজির হয়ে যান। সালাম, শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করুন। কেননা নবীজি (স.) কোনো মুসলমানের জন্য তার অপর কোনো ভাই-বন্ধুর সঙ্গে তিন দিন সাক্ষাৎ ও কথা বর্জন করা হালাল নয়।

তরজমা : কেউ যদি তিন দিনের বেশি কথা বর্জন করে এবং সে অবস্থায় সে মারা যায়, তবে সে জাহান্নামে যাবে (আবু দাউদ-৪৯১৪)। সৌহার্দ-সমবেদনার এই দিনে আসুন নিজেই অভিমানী বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পুণ্যের অপূর্ব উদাহরণ সৃষ্টি করি।

মুদাররিস : শেখ জনূরুদ্দীন (রহ.) দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।