ভারতীয় পোশাকের বাজার দখল করেছে পাকিস্তান

লাবণ্য লিপি
২৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ভারতীয় পোশাকের বাজার দখল করেছে পাকিস্তান

ঈদ প্রায় চলে এসেছে। শেষ সময়ের কেনাকাটায় রাজধানীর শপিংমলগুলোয় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এখন আর তারা দেখে খোঁজ-খবর নিয়ে চলে যাচ্ছে না, পছন্দ ও বাজেটে মিললে কিনে নিচ্ছে। বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার নারীদের কাছে পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। যদিও বিগত বছরগুলোতে ভারতীয় পোশাকের দখলে ছিল ঈদ বাজারের অনেকটাজুড়ে। কিন্তু বর্তমানে চিত্র বদলে গেছে। ঈদে যে ক্রেতারা আগে ভারতীয় পোশাক কিনতে হুমড়ি খেয়ে পরতেন, তারাই এখন পছন্দের তালিকায় রাখছেন পাকিস্তানি পোশাক। এখন দেশের ভারতীয় পোশাকের বাজার দখল করেছে পাকিস্তান।

এদিকে তরুণদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পোশাক। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমলে সপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন রুশনারা ফেরদৌসী। কী কী নিলেনÑ জানতে চাইলে রুশনারা বলেন, দুই ছেলের জন্য ওদের পছন্দের ব্র্যান্ডের প্যান্ট-শার্ট কিনেছি। স্বামী

কিনেছে কে-ক্র্যাফট থেকে পায়জামা-পাঞ্জাবি। আর আমি দুটি পাকিস্তানি থ্রি-পিস কিনেছি।

পাকিস্তানি পোশাক কেন বেছে নিলেনÑ জানতে চাইলে রুশনারা বলেন, সত্যি বলতে কী, আগে ঈদের সময় ভারতে গিয়ে শপিং করে আনতাম। এখন ভিসা না দেওয়ায় ভারত যেতে পারছি না। এ ছাড়া পাকিস্তানি পোশাকগুলোও খুব ভালো লাগে। ওদের পোশাকের কাটিং, নকশা, জারদৌসী কাজ আমার ভালো লাগে। তাই এবার পাকিস্তানি ড্রেস কিনেছি। অবশ্য এখনও শাড়ি কিনিনি। শাড়ি কিনব দেশীদশ থেকে।

পাশেই দুই তরুণী নিজেদের জন্য পোশাক পছন্দ করছিলেন। বিক্রেতা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, কী নেবেন বলেন আপা। আগানূর, মার্শাল, কারিশমা, জোহরাকুল, তাওয়াক্কাল সব আছে। এগুলো কিসের নাম জানতে চাইলে দোকানটির বিক্রয়কর্মী জানান পাকিস্তানি থ্রি-পিসের নাম। দুই নারী ক্রেতার কাছে পছন্দের পোশাক সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, পাকিস্তানি টু-পিস, থ্রি-পিসগুলো খুব সুন্দর। আমরা তো থ্রি-পিস পরি। আর ওদের ওড়নাগুলোও বেশ বড়। তাই এবার পাকিস্তানি পোশাকই কিনব।

মোহাম¥দপুরের লা রিভের শোরুমে কথা হয় নাসরীন হকের সঙ্গে। নাসরিন জানান, আমি সব সময় দেশীয় ব্র্যান্ড থেকেই কেনাকাটা করি। আড়ং, দেশি লা রিভ, ক্যাটস আই, সারা, আর্টিসান এগুলো তো ইন্টারন্যাশনাল মানের ব্র্যান্ড। নিজেদের ভালো ব্র্যান্ড থাকতে ভারত-পাকিস্তানে টাকা দিতে যাব কেন!

ঈদ আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছরই ঈদকে কেন্দ্র করে একটা ফ্যাশন ট্রেন্ড দেখা যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে বছরব্যাপী কাজ করেন ফ্যাশন ডিজাইনরা। কথা হয় ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিশ^রঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা তো শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে কাজ করি না। আমরা কাজ করি দেশীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি নিয়েও। আমাদের এবারের ঈদ পোশাকের একটা থিম ইসা খাঁর জমিদার বাড়ি। এই যে একটা ডিজাইন, এটা তো আমাদের ঐতিহ্য। নিজের দেশ, নিজের কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। এটা ক্রেতাদেরও বুঝতে হবে।

ঈদ বাজারে এবার পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সানভিনস বাই তনির স্বত্বাধিকারী তনি বলেন, বর্তমানে ভারতীয় পোশাক আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা বেড়েছে। ভিসা সংকটের কারণে ভারত যাওয়াও কমেছে। সেই তুলনায় পাকিস্তানি পোশাক আমদানি সহজ হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে পাকিস্তানি সিরিয়ালগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সিরিয়ালের নারীদের পোশাক আকৃষ্ট করছে আমাদের দেশের নারীদের। পাকিস্তানি সালোয়ার কামিজ, কুর্তি সেটগুলোর ডিজাইনে বৈচিত্র্য এবার ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। আমাদের ক্রেতাদের পছন্দ অনেকটাই মিডিয়ানির্ভর। এর আগে ভারতীয় সিরিয়ালের ‘পাখি’ চরিত্রের সেই পাখির পোশাকের মতো পোশাক কিনতে মার্কেটে নারীদের ঢল নেমেছিল। এবার সে জায়গা দখল করে নিয়েছে পাকিস্তানি পোশাক।

পাকিস্তানি পোশাকের দাম প্রসঙ্গে তনি বলেন, ভারতীয় পোশাকের তুলনায় পাকিস্তানি পোশাকের দাম একটু বেশি। এর কারণ পাকিস্তানি পোশাকের কাপড় উন্নত মানের। আরা এর ডিজাইন ও নকশাও বেশ গর্জিয়াস। তবে পাকিস্তানি পোশাক নকলও বেরিয়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে সেটা বুঝতে পারা সহজ না। আমরা ব্যবসায়ী। অনেক সময় আমরাও ধরতে পারি না। তাই কখনও কখনও ক্রেতারা ঠকেও যাচ্ছেন।

ঈদের কেনাকাটায় বিদেশি পোশাকের আগ্রাসন কেন বলে মনে করেনÑ জানতে চাইলে ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও ফ্যাশন হাউস সাদাকালোর স্বত্বাধিকারী আজহারুল হক আজাদ বলেন, এর কারণ বিদেশি পোশাক আমদানি অনেক বেশি সহজ। কর কম দিতে হয়। তুলনামূলকভাবে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন উদ্যোক্তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের করহার, কাঁচামাল সংগ্রহ, তাঁতীদের মজুরি, বাড়ি ভাড়া সব জায়গায়ই ব্যয় বেশি। তবে এটা ঠিক, একটা নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রেতা আমাদের দেশীয় পোশাক কেনেন। তারা বিদেশি পোশাক যতই চাকচিক্য থাকুক, দেশিটাই কিনবে।

দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ডিজাইনের বৈচিত্র্যে পিছিয়ে আছে বলেন ক্রেতারা অভিযোগ করেন। এ ক্ষেত্রে আপনি কী মনে করেন? আজাদ বলেন, এগুলো জোরালো কোনো কারণ না। আমাদের ফ্যাশন খাত ডিজাইন নিয়ে সারা বছর কাজ চলছে। যারা কেনার তারা কিনবেই।

ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা আফসানা ফেরদৌসী বলেন, আপনারা ঈদে দেশের মানুষের তৈরি পোশাক কিনতে চেষ্টা করুন। এতে উদ্যোক্তারা উপকৃত হবে এবং দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক হবে। আপনাদের একেকটি পণ্য ক্রয় আমাদের জন্য শুধু ব্যবসা নয়, টিকে থাকার লড়াই।