ঈদযাত্রায়ও আসন খালি লঞ্চে ভিড় বেড়েছে ট্রেনে
যাত্রীদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় সদরঘাট তার জৌলুস হারিয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীরা এখন সড়কপথেই যাতায়াতে বেশি আগ্রহী। নৌপথের যাত্রীরা সড়কপথ বেছে নেওয়ায় লঞ্চের ব্যবসায়ও ভাটা পড়েছে।
লঞ্চসংশ্লিষ্টরা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি অঞ্চলে লঞ্চ সংখ্যা কমেছে। তবে চাঁদপুর, ভোলা, চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা অঞ্চলে তেমন প্রভাব পড়েনি। এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় গতকাল থেকে ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে।
লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগের তুলনায় লঞ্চ কমেছে। ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌরুটে আগে লঞ্চ ছিল ২২৫টি। যাত্রী কমায় এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০। যাত্রীসংকটে কমেছে নৌপথও। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে।
লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৮শ থেকে দুই হাজার নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪শ, সিঙ্গেল কেবিন ১২শ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া ২৪শ টাকা নেওয়া হয়। তবে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।
তাসরিফ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. আকতার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু নৌপথে প্রভাব ফেলেছে। ঈদের আগে যাত্রীদের চাপে বন্ধ হয়ে যেত ঘাট। কিন্তু এখন তা স্বপ্নের মতো।আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বুকিং নেই। গ্লোরি অব শ্রীনগর-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার রাকিব হোসেন বলেন, এখনও সবাই ছুটি পায়নি। ২৬ রোজার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। যাত্রাপথে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের টুকটাক কিছু মেরামত করিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এমভি অথৈ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পাওয়ার আশায় ঢাকায় এসেছি। লস দিয়ে আসতে হয়েছে। এখন ভিড় অনেক কম। আমাদের অগ্রিম বুকিং এখনও শুরু হয়নি।
অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সেলিম বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে পুরো রমজান যাত্রীর যে ভিড় তা এখন আর হয় না। লঞ্চে কেবিন আছে একশোর বেশি। বর্তমানে ২০-২৫টি ভাড়া দিতে পারি।
এমভি মানালীর সুপারভাইজার জানান, আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বরিশাল অফিস থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পরের এবং আগের উভয় সময়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আমরা মূলত ১৫ রমজান থেকেই টিকিট ছেড়েছি। তবে সব লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি। এমনকি অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থপনাও নেই লঞ্চগুলোতে। সদরঘাট লঞ্চ মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ফজলুল হক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই ঘাটে যাত্রী কম। বলা চলে অর্ধেকরও কম। ২৫ রমজান থেকে ভিড় একটু বাড়বে।
এদিকে প্রতিবছর ঈদের আগে লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চগুলো রঙ করে নতুন সাজে ঈদযাত্রার জন্য আনলেও এবার এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রেখেছে মালিক সমিতি ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ পরিবহনের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ঈদযাত্রা সুন্দর ও নির্বিঘœ করতে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না।
অন্যদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় গতকাল থেকে ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেন চলার প্রথম দিনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে (কমলাপুর) যাত্রীদের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল কমলাপুর স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের লাইনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ট্রেনের রেক। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ব্যাপক জটলা। তবে প্ল্যাটফর্মে টিকিটবিহীন যাত্রী কম থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে আছেন টিকিটধারী যাত্রীরা।
অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মাসুদ বলেন, শেষের দিকে ভিড় হয় বলে শুরুর দিকেই যাচ্ছি। কিছু ট্রেনের যাত্রাবিলম্ব হয়েছে গতকাল। এ নিয়ে কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় আসা বুড়িমারী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি রেকে কানেক্ট করতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে আর ইঞ্জিন রিপ্লেসমেন্টে সময় লেগেছে এগারোসিন্দুরের।
এদিকে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে রেলওয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলেও তা ছিল ঢিলেঢালা। সকালে কিছু সময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি জিআরপি পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়। তবে সময় গড়াতে স্টেশনের প্রবেশপথে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। যাত্রীদের টিকিট চেকিং কাজটিও ঢিলেঢালাভাবে করতে দেখা যায় এ সময়।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অন্যদিকে সকাল ৮টায় ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অগ্রিম টিকিটের শতভাগই বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টা থেকে ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।