গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি ফোটায় ফিতরা

মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
২৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি ফোটায় ফিতরা


জীবন নির্বাহের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মালিক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। যব, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও গম-আটা বা এর বাজারমূল্যে ফিতরা আদায় করা যায়। গম বা গমের আটার মাধ্যমে ফিতরা আদায় করলে আধা সায়া (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) এবং যব, খেজুর, কিশমিশ, পনিরের মাধ্যমে হলে এক সায়া (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) আদায় করতে হবে। অথবা এর মূল্য আদায় করলেও চলবে (দুররুল মুখতার ও ফতোয়ায়ে আলমগিরি)।

এ বছর বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর (২০২৪) সর্বনিম্ন ফিতরা ছিল ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের ফিতরার এ হার নির্ধারণ করা হয়।

সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সভায় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের ফিতরার হার জানান।

সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- ইসলামি শরিয়াহ মতে গম, আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির, যব ইত্যাদি পণ্যের যে কোনো একটি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যাবে। গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৬৫ টাকা আদায় করতে হবে। আর খেজুর দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২০০০ টাকা, কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৪৮৫ টাকা এবং পনির দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৫৮৫ টাকা ফিতরা আদায় করতে হবে। ফিতরা প্রদানকারী নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ফিতরা আদায় করতে পারবেন।

দুই.

দ্বিতীয় হিজরি সনে ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে ইসলামে সর্বপ্রথম ফিতরার বিধান দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রোজার শেষে বললেন, তোমরা ফিতরা আদায় করো। রাসুল (স.) বলেন, এক সায়া খেজুর, যব অথবা আধা সায়া গমের মাধ্যমে ফিতরা আদায় মুসমিল নারী-পুরুষের ওপর বাধ্য করা হয়েছে (আবু দাউদ)। ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত- রাসুল (স.) ফিতরা আদায় করতে বলেছেন, যা অনৈতিক কথা ও কাজ থেকে রোজাকে পরিশুদ্ধ করে; ফিতরা গরিব-দুঃখীর অধিকারও (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস-১৬১৯)।

হজরত আনাস (রা.) সূত্রে রাসুল (স.) অন্যত্র বলেছেন, দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর রাগ প্রশমিত হয় এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায় (তিরমিজি, হাদিস-৬৫৮)। ফিতরা ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে মানবিক দিকও আছে- ফিতরার সামান্য অর্থে গরিব দুঃখীরা ঈদ উপভোগ করে, নিঃস্ব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটে।

শিক্ষক : শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।