বাজেটে থাকছে না অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প
দেশে প্রতিবছরই ঢাউস আকারের বাজেট দেওয়া হয়, অর্থবছর শেষে যা বাস্তবায়িত হয় না। অর্থবছরের শেষদিকে কাঁচি চালিয়েও অবাস্তবায়িত থেকে যায় বাজেট। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৪.২৭ শতাংশ। এসব বিষয় মাথায় রেখে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে অনুযায়ী কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আগামী অর্থবছরে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অযৌক্তিকভাবে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। বাস্তবসম্মত উপায়ে এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এ বাজেট অগ্রাহ্য করতে না পারে। তিনি বলেন, বাজেটে বিরাট বিরাট মনুমেন্টাল (লোক দেখানো) প্রকল্প নেওয়া হলো, কিন্তু সময়মতো বাস্তবায়ন হলো না- এগুলো প্রকৃতপক্ষে উপকারে আসে না। তাই আগামী বাজেটে এ ধরনের অযৌক্তিক বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কাজ হবে না। বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে যাওয়া। তবে বর্তমান সরকারের সংক্ষিপ্ত সময়ে পুরোপুরি এ কাজ করা সম্ভব হবে না। এ সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে কিছু সংস্কার আনা হবে। বাজেটে সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এবারও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সবুজ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে, সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ থেকে নীতিমালা বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু অনুমোদন হয়েছে এমন সব প্রকল্পে আর সংশোধিত এডিপিতে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এসব প্রকল্পে বরাদ্দসহ এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ কিংবা অনুদানে বাস্তবায়ন হচ্ছে এসব প্রকল্পে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে। পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ত্বরান্বিত করে এসব প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়াও মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এমন সব প্রকল্পে এডিপির জন্য অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্পে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে সংশোধিত এডিপিতে শেষ করার জন্য নির্ধারিত তালিকাভুক্ত কোনো প্রকল্প নতুন অর্থবছরের এডিপির জন্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। এডিপিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
নীতিমালায় বলা হয়, বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের পাওয়া ব্যবহারের জন্য জিওবি বাবদ বরাদ্দের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনুমোদিত নতুন প্রকল্প যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন হওয়ার পরই অর্থায়নের জন্য থোক বরাদ্দ হিসেবে মোট বরাদ্দের কমপক্ষে ৫ শতাংশ অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। এলাকাভিত্তিক ও অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের জন্য এডিপিতে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্পভিত্তিক চাহিদা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পাশাপাশি আগামী ২০২৬-২৭, ২০২৭-২৮ অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য সেক্টরের আওতাধীন ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এসব সেক্টরের মাল্টি ইয়ার পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম তৈরি হবে। যে কারণে বেশকিছু বিবেচনায় নিতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি নীতিমালায় এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে যেসব প্রকল্প এখনও অনুমোদন পায়নি সেসব প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুনভাবে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান চুক্তি হয়েছে এ ধরনের প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য অগ্রাধিকার পাবে। যেসব বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্ভাব্য সমীক্ষা শেষ হয়েছে, সেসব প্রকল্প অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় প্রস্তাবের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়নে সহায়ক এমন সব অননুমোদিত নতুন প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেসব প্রকল্প প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বাস্তবায়ন হবে, এসব প্রকল্পের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতা রোধে সমন্বিত নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম