গুলশানে যুবক খুনে সেভেন স্টার গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গুলশানে যুবক খুনে সেভেন স্টার গ্রুপ

গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে বৃহস্পতিবার রাতে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে গুলি করে হত্যার পেছনে মহাখালীর ‘সেভেন স্টার গ্রুপের’ সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তাদের দাবি। পুলিশ বলছে, ইন্টানেট ব্যবসার দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর মহাখালী এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন ওরফে টেলি সুমনকে খুনের টার্গেট করা হয় নিকেতন এলাকার একটি ক্লাব থেকে। হত্যার আগে ওই ক্লাবেই খুনিদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান সুমন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে পুলিশ প্লাজার সামনে এসে বসেন। সেখানে এসে প্রথমে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় খুনিরা। একপর্যায়ে সুমনকে লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেই পাঁচজন। খুনিরা সুমনের পূর্বপরিচিত ছিল বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে গুলশান-১-এর পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের সড়কে সুমন মিয়াকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। ওই ঘটনায় সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার

গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেল ও তার সহযোগীরা এর আগে একাধিকবার সুমনের ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন এবং তাকে মারধরও করেছিলেন। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরেই সুমনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

মৌসুমী আক্তার জানান, মহাখালীর টিবি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা রয়েছে। তিনি মহাখালী এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দিতেন। আর সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলও মহাখালীতে কেব্ল টিভি সংযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। ২০২০ সালে করোনার সময় রুবেলের সহযোগী জামাল, সেন্টু ও আফজাল মারধর করে সুমনের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ সময় তারা কয়েক লাখ টাকার ইন্টারনেট লাইনের তার নিয়ে যান। পরে তৎকালীন গুলশান থানার ওসিকে অনুরোধ করে পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই সংযোগ আবার চালু করেছিলেন সুমন।

মৌসুমী বলেন, তখন সন্ত্রাসী রুবেলের সহযোগী জামাল ও সেন্টুর নেতৃত্বে মহখালীর টিবি হাসপাতালের গেট এলাকায় সুমনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে তার দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জামালসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। পরে তারা জামিনে মুক্ত হন। পরে আফজাল, শফিক, বিন্দু ও সেন্টু কয়েকবার সুমনকে মারধর করেন। এর পর টিবি হাসপাতাল এলাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তারা ভাসানটেকের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। তার বাবার নাম মাহফুজুর রহমান।

মৌসুমী আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার সালোয়ার কামিজ তৈরির জন্য গুলশান-১-এর পুলিশ প্লাজার কাছে গিয়েছিলেন সুমন। সেখান থেকেই হয়তো তাকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে সুমনের শ্বশুর আক্তার শেখ বলেন, এর আগে রুবেলের এক সহযোগীকে অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুমন। তার পর থেকে রুবেল বাহিনী তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। রুবেল বাহিনী কয়েকবার সুমনকে মারধর করে, আবার তার বিরুদ্ধেই থানায় মামলা দিয়েছিল। তারা সম্প্রতি সুমনকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, সুমন মিয়া হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। রুবেল গ্রুপের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব ছাড়াও অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশের গুলশান থানার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র‌্যাব এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে।

নিহত সুমনের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে গুলশান, বনানী ও বাড্ডা থানায় ছয়-সাতটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।