অসহায়দের স্থায়ী স্বাবলম্বীর পরিকল্পনা করুন

মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
১৬ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
অসহায়দের স্থায়ী স্বাবলম্বীর পরিকল্পনা করুন

কোরআন শরিফে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর আর নিজেদের জন্য কল্যাণকর যা কিছু আগেভাগে পাঠাবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই আল্ল­াহ তোমাদের সব কাজকর্ম দেখছেন (সুরা বাকারা-১১০)।

নবী যুগের মানুষেরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে জাকাত আদায় করেছেন। যে আরববাসী অভাবের তাড়নায় দেবতাদের পর্যন্ত চেটে খেয়েছেন, পশুর রক্ত, চামড়া, হাড় কিছুই বাদ পড়ত না তাদের খাদ্য তালিকা থেকে; নবীর (স.) জাকাতব্যবস্থায় মাত্র কয়েক বছরে অর্থনৈতিক এমন পরিবর্তন আসে যে, আরবে জাকাত দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যেত না। জাকাতের পূর্ণ সফলতা তখন মুসলমানরা ভোগ করেছেন। কারণ খোলাফায়ে রাশেদিন ও তাদের পরবর্তী যুগে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জাকাতবিষয়ক কার্যক্রমের জন্য স্বতন্ত্র ৮টি দপ্তর ছিল। দুর্নীতিমুক্ত কঠোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত আদায় ও উপযুক্ত স্থানেই বণ্টন হতো (ইসলামী অর্থনীতি-১৭০)।

আজকের আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকারি আইন ও প্রশাসনিকভাবে জাকাত আদায় করা হয়। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সুদান, কুয়েত, ইরান, পাকিস্তান ও ইয়ামেনে এই ব্যবস্থা চালু আছে। বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতেও মুসলিমপ্রধান এলাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন পরিকল্পিতভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করে। বাংলাদেশের সরকার বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দরিদ্র-জনগোষ্ঠীর স্থায়ীভাবে অভাবমুক্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চলমান ধারায় প্রাথমিক সংস্কার করেও স্থায়ী দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। জাকাতের অধিকারী আট শ্রেণির লোকদের আল্ল­াহ বলেছেন, সদকা তো কেবল গরিব, মিসকিন এবং সদকা আদায়ে নিযুক্তদের জন্য। যাদের ধর্মের প্রতি চিত্তাকার্ষণ করা হয় তাদের জন্যও। দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথ ও মুসাফিরের জন্য। এটা আল্ল­াহর বিধান, আল্ল­াহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (সুরা তওবা-৬০)।

এই আয়াতের ভিত্তিতে বিত্তবানরা নিজস্ব এলাকায় গরিব অসহায় চিহ্নিত করে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করবে। পঞ্চাশ, একশত টাকা করে হাজার মানুষকে না দিয়ে তিন-চারটি পরিবারের স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করবে। তাদের জন্য রিকশা, ভ্যান, নৌকা, সেলাই মেশিন, গাভী, ছাগল বা এ জাতীয় উপকরণ কিনে দেবে। তা হলে দেখা যাবে একজন বিত্তবানের প্রচেষ্টায় প্রতি পাঁচবছরে ২০-২৫টি পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। যারা কাজ করতে অক্ষম যেমনÑ বৃদ্ধ, পঙ্গু, রোগী তাদের এলাকাভিত্তিক কল্যাণ ফান্ড গঠন করে নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা ছাড়া মানবকল্যাণমূলক কাজ যেমনÑ মেধাবী অথচ গরিব ছাত্রের উন্নত শিক্ষার জন্য স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডিসপেনসারি নির্মাণ; বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, সিডর, আইলা তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে জাকাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। দেশের জাকাত প্রদানকারীদের কাছে প্রত্যাশা থাকবেÑ দুঃখীদের স্থায়ী কল্যাণের ব্যবস্থা করুন। ইসলামের মৌলিক চেতনা জীবনে বাস্তবায়িত করুন।

শিক্ষক : শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।