যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারে স্বস্তি এসেছে। দিন দিন রপ্তানি বাড়ছে এ বাজারে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে মর্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বাড়ায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের মনেও স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় ছিল ৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কারকরা ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে তারা আমদানি করেছিল ৬০৩ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে সাড়ে ১৯ শতাংশ।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ বাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সাল শেষে বড় প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারায় ফেরে। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমেছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় বাজারটি নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনার কথা বলেন বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করবে। ফলে বাড়তি ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের জন্য।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। বিনিয়োগের সেই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। অবশ্য বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রভাব বলে জানান পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, ভারতের রপ্তানি ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৪৭৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার, ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৪১৯ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়ার রপ্তানি ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৩২৪ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার ও মেক্সিকোর রপ্তানি ১ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে ১৯৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রপ্তানি সাড়ে ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৭৯ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
ওটেক্সার তথ্য বলেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ওভেন পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ১১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। রপ্তানি ১২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্টের বাজার বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে- এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশীয় উদ্যোক্তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রপ্তানির ধারা দিন দিন বৃদ্ধি করছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এ উদ্যোক্তা।