বাজেট ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা

আবু আলী
১১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাজেট ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা

বাজেটের ব্যয় মেটাতে সরকারের ঋণনির্ভরতা আরও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের জন্যও সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ করতে যাচ্ছে। আগামী বাজেট হতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার। এর এক-তৃতীয়াংশ অর্থই আসবে দেশি-বিদেশি ঋণ হিসেবে। এতে ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার মতো।

বাজেট তৈরির সময় সরকার ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় প্রতি অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। তারপরও ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে, যা মেটাতেই বিপুল ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। ঋণের বেশির ভাগ অর্থই আসবে আবার দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে কর রাজস্ব ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এই রাজস্ব সংগৃহের মধ্যে এনবিআরের কর রাজস্ব ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির ৮ দশমিক ২ শতাংশ, এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং করবহির্ভূত রাজস্ব ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ০ দশমিক ৭ শতাংশ।

ফলে বাজেটে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই হিসাবে ঘাটতি বাড়বে ৭ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ। আর বৈদেশিক উৎস থেকে নেবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি, যা জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৯৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই কারণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি ঋণ নেওয়া খারাপ। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা অর্থাৎ জনগণকে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে মিটিয়ে থাকে। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী টাকা ছাপালে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়, যার পরিণতিতেই ঘটে মূল্যস্ফীতি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ মুহূর্তে তাদের সামনে প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, রিজার্ভ বাড়ানো ও ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসের পর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি। গত মার্চ মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।