মালিকানায় সরকারি অংশ কমছে

তাওহীদুল ইসলাম ও আবু আলী
০৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
মালিকানায় সরকারি অংশ কমছে

নোবেলজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন হচ্ছে। ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের অংশীদারত্ব ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সরকারি ক্ষমতা কমিয়ে সরকারের জন্য দুজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিধিবিধানে পরিবর্তন আসছে। ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের আরও শক্তিশালী ও ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে সরকারি অংশের অনুপাত কমিয়ে ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের আনুপাতিক হার বাড়ানো হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে। আগামী ৯ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংক আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া পর্যালোচনাসভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর ও ৩ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়

এবং অংশীজনদের নিয়ে সভা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সভার সিদ্ধান্ত ও অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংক আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খবর অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের।

খসড়ায় বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড পরিচালকদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। বিদ্যমান আইনে ব্যাংকের বোর্ডে সরকারের নিযুক্ত পরিচালকদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান আছে। সরকারই এ নিয়োগ দিয়ে আসছে। এ ছাড়া এমডি নিয়োগে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে দেবে ব্যাংকের বোর্ড। সেখানে সদস্য থাকবেন ৩ থেকে ৫ জন। তবে বিদ্যমান আইনে আছে প্রার্থী বাছাইয়ে চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আলাপ করে সিলেকশন কমিটি গঠন করবেন, যাতে তিন থেকে পাঁচজন থাকবেন। অর্থাৎ বিদ্যমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি নিয়োগ, সিলেকশন কমিটি গঠনের ক্ষমতা ছিল বোর্ডে সরকার নিযুক্ত পরিচালকদের হাতে। সংশোধিত আইনে সেটি বোর্ডের পর্ষদের হাতে থাকছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রসঙ্গে খসড়া আইনে বলা আছে, যদি পদটি শূন্য হয়, কিংবা অনুপস্থিত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে এমডি ছাড়া অন্য কোনো পরিচালক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

বিদ্যমান আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করার বিধান থাকলেও সংশোধিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, বোর্ডের বিবেচনায় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে ওই পদে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে বোর্ড কর্তৃক সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত করা যাবে। এ ছাড়া ওই পদ তিন মাস শূন্য থাকলে বোর্ড নিজস্ব সিদ্ধান্তে নিয়োগ দিতে পারবে। তবে বিদ্যমান আইনে আছে উল্লিখিত পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ শূন্য থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ব্যাংকের বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা ওই পদের দায়িত্ব পালন করবেন।

পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলা হয়, চেয়ারম্যান বা এমডি বা অন্য কোনো পরিচালক বোর্ডের কাছে লিখিত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন। তবে শর্ত রয়েছে- বোর্ড কর্তৃক গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগ কার্যকর হবে না।

এ ছাড়া বর্তমান পর্ষদ বোর্ডে সরকারের নিযুক্ত তিনজন এবং ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার থেকে নির্বাচিত ৯ জন পরিচালক আছেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে সরকারের পরিচালক তিনজন থেকে কমিয়ে দুজন এবং ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার থেকে ৯ জন নির্বাচিত পরিচালকের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ জন করা হচ্ছে।

নির্বাচিত পরিচালকরা কার্যকাল থেকে প্রতি মেয়াদে তিন বছর এবং সরকারের নিযুক্ত প্রত্যেক পরিচালক সরকারের সন্তুষ্টি অনুযায়ী প্রতি মেয়াদে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে কোনো পরিচালক ধারাবাহিকভাবে দুই মেয়াদের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। দুই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের পরিচালক পদে পুনর্নির্বাচন করতে পারবেন না।

খসড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যবহুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর মাধ্যমে স্থাপিত গ্রামীণ ব্যাংক, যা ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’ থেকে উদ্ভূত, এমনভাবে বহাল থাকবে যেন তা এ আইনের অধীনে স্থাপিত হয়েছে।’ ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি কর্মসূচির আওতায় গৃহীত গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প, যা পরে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং এতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশগ্রহণ করে।

খসড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের বা সরকার পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত একক বা যৌথভাবে মোট শেয়ারের পরিমাণ ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক করা হয়েছে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের (শেয়ারহোল্ডার)। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ক্রমান্বয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পাশাপাশি পরিচালনা বোর্ড কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করলে পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের অনুপাতে দেওয়া হবে।