বাজেটে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখে অর্থ ছাড় করবে আইএমএফ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এবার কিস্তি পেতে দেরি হচ্ছে। আগের তিন কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে, যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আর্থিক খাত সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। চলতি মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন চয়েছে সংস্থাটি। এপ্রিলে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল আবার ঢাকা সফর করবে বলে প্রাথমিকভাবে শিডিউল প্রস্তুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সংস্থাটির সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তির চতুর্থ কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে ছাড় করার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে জুনে করা হবে। এমনকি আসন্ন ২০২৫-২৬ বাজেটে আইএমএফের সঙ্গে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন দেখে ঋণের কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি। চতুর্থ কিস্তিতে পাওয়ার কথা ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছর ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রতিবার কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদন লাগে। এর আগে ঋণের শর্তপূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে আইএমএফের দল। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের লক্ষ্যে আইএমএফের দল ঢাকায় আসে গত ডিসেম্বরে। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির পর্ষদ বৈঠকে চতুর্থ কিস্তির টাকা ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়েছে। বৈঠক হবে আগামী ১২ মার্চ। কিন্তু ওই বৈঠকেও অনুমোদন হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রদেয় ঋণের দুই কিস্তির (৪র্থ ও ৫ম) অর্থ আগামী জুনে একসঙ্গে ছাড় করবে আইএমএফ। অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা আপাতত আইএমএফের ঋণের কিস্তির জন্য মরিয়া নই। এর আগে আইএমএফ বলেছিল- শর্তের পরিপালন ঠিকঠাক মতো না হলে যেকোনো সময় ঋণের কিস্তি আটকে দেবে। যেসব জায়গায় আইএমএফ অধিক জোর দিয়েছে এবং অগ্রগতি জানতে চেয়েছে সেগুলো হলো- বাজেটে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা, ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে স্মার্ট পদ্ধতি প্রচলন করা, আন্তর্জাতিক নিয়মে রিজার্ভের হিসাব সংরক্ষণ করা, কর-জিডিপি বাড়ানো, ভ্যাট আইন-২০১২ সংশোধিত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা। এসব বিষয়সহ সামষ্টিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে, যা আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধানের কাছে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, প্রথম তিন কিস্তির অর্থ জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে সঠিক সময়ে ছাড় করা হয়েছে। এমনকি অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলও করেছিল সংস্থাটি। ওই সময় দেশের অর্থনীতি অনেক বেশি অস্থিতিশীল ছিল। পণ্যমূল্যও বেড়ে গিয়েছিল। সেসব বিষয় আমলে নিয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত সহায়তা দিয়েছিল আইএমএফ। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল, পণ্যমূল্যও কিছুটা কমেছে। রিজার্ভ বেড়েছে। রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। বাজেট ব্যবস্থাপনায় যেসব পরিবর্তন আনার কথা, সেগুলোর বিষয় তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আবার শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতেও অস্থিরতা কমেনি। সরকার পরিবর্তন হলেও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জনবল ছাড়া তেমন পরিবর্তন আসেনি। এ জন্য চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রসঙ্গে শর্ত পরিপালনের বিষয়ে কঠোরতা দেখাচ্ছে আইএমএফ।
এদিকে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংস্কার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। একই সঙ্গে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে দৃশ্যমান কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, সরকার এখনও ডলারের বিপরীতে টাকার মান জোর করে ধরে রেখেছে। এজন্য টাকাকে আরও অবমূল্যায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।