রোজা এলো যেভাবে

মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
০৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রোজা এলো যেভাবে

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির একটি ‘রোজা’। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকে বিরত থাকার নাম ‘রোজা’। ইসলামি বিধান অনুসারে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ। ‘রোজা’ ফার্সি শব্দ। ‘সাউম’ বা ‘সাওম’ আর রোজা হলো নিয়তের সঙ্গে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসুলদের জামানায় রোজা ফরজ ছিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন রোজা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। সূরা আল বাকারা : ১৮৩

সকল নবী-রাসুলের ওপর রোজা ফরজ থাকলেও এর সময়সীমা, মাস ও সংখ্যা নিয়ে কিছুটা কম-বেশি ছিল। প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা ফরজ ছিল হজরত আদমের (আ.) ওপর। রোজার শুরু হজরত আদম (আ.) থেকে। তিন দিন তাদের ওপর রোজা ফরজ ছিল। হজরত আদমের উম্মতেরা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা পালন করতেন। রোজার এই ফরজ বিধান ধারাবাহিকভাবে হজরত নুহ (আ.) পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মেও রোজার প্রচলন ছিল। বিশেষভাবে ইহুদিদের মধ্যে সপ্তাহে শনিবার, বছরের মহরমের ১০ তারিখ রোজার বিধান কার্যকর ছিল। অবশ্য হজরত মুসার (আ.) ওপর তাওরাত নাজিলের আগে তুর পাহাড়ে আসা-যাওয়ার চল্লিশ দিনও ইহুদিরা রোজায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। হজরত ঈসা (আ.) ইঞ্জিল পাওয়ার আগে দীর্ঘ চল্লিশ দিন সিয়ামে মগ্ন ছিলেন। হজরত দাউদ (আ.) এক দিন পর পর রোজা পালন করতেন। বুখারি : ৩২৩৭

হিন্দুরাও প্রতিটি পূজায় ব্রতী পূজারি ও অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা নারী-পুরুষ উপবাস পালন করে থাকেন। এ ছাড়াও অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ইত্যাদি তিথিতে উপবাস করে থাকেন হিন্দু ধম্বালম্বীরা। হিন্দু ব্রাহ্মণরাও একাদশী ও দ্বাদশীর উপবাস পালন করে থাকেন।

আল্লামা ইমাদ্দুদিন ইবনে কাসিরের মতে- ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিন দিন রোজা রাখার বিধান ছিল। পরে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে।

অন্যান্য ধর্মে রোজার বিধান থাকলেও ইসলামের রোজা আর অন্য ধর্মের রোজায় পার্থক্য অনেক। ইহুদি ধর্মে রোজা শোক ও বেদনার প্রতীক। রোজা মুসলমানদের জন্য শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের পন্থাও। উন্নত চরিত্র গঠনেরও উপায়। নৈতিকতা ও মানবিকগুণে গুণান্বিত হয়ে গড়ে ওঠার কৌশল। রোজার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।

প্রথম রোজায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) সহিফা এবং ৬ রোজায় হজরত মুসা (আ.) তাওরাত লাভ করেন। ১৩ রোজায় ঈসার (আ.) ওপর ইঞ্জিল, ১৮ রোজায় হজরত দাউদের (আ.) ওপর জাবুর এবং ২৭ তারিখে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন অবতীর্ণ হয়।

ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরের যুদ্ধের সূচনা ১৭ রোজায়। নবীদৌহিত্র হজরত হাসানের (আ.) জন্ম হয় ১৫ রোজায়। জান্নাতি নারীদের নেত্রী ফাতেমার (রা.) মৃত্যু ৩ রোজায়। হজরত খাদিজা (রা.) ও হজরত আয়েশার (রা.) শেষ বিদায় যথাক্রমে- ১০ ও ১৭ রোজায়। ২১ রোজায় শেষ বিদায় নেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)। মুসলমানদের রোজা কেবল দিনব্যাপী উপোস থাকার ইতিহাস নয়, বিভিন্ন ঘটনার ইতিহাস ও সামাজিক বন্ধনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও।

লেখক : শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া ঢাকা।