রমজানে লোডশেডিং হবে অঞ্চলভিত্তিক

লুৎফর রহমান কাকন
০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রমজানে লোডশেডিং হবে অঞ্চলভিত্তিক

পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। তবে এ মাসজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কঠিন হবে। তাই এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং বা লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানির জোগান নিশ্চিত না হওয়ায় পূর্ণ সক্ষমতায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে না। ফলে লোড ম্যানেজমেন্টই ভরসা। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা যায়, রমজানজুড়ে তথা মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট এবং গ্রীষ্মকালে এপ্রিল-মে মাসে গড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে। তবে নানা সংকটে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। আর্থিক সংকটসহ নানা কারিগরি সংকটে এই সময়ে চাহিদার সবটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না। ফলে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রমজানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। গ্রীষ্মেকালে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। মূলত গ্যাসের সংকট এবং জ্বালানি সংকটে চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে না।

এসব বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাম্প্রতিক সময়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রমজান মাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে। তবে চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না। ফলে লোড ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, তবে এবার গ্রাম ও শহরে সমান লোডশেডিং দেওয়া হবে। গ্রামে লোডশেডিং হবে আর শহরে হবে না- এমনটা করা যাবে না।

বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক জ্বালানির সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় রমজানে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাসের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে একদিকে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও অন্যদিকে নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাসের জোগান কমছে। যদিও সরকার রমজানে লোডশেডিংমুক্ত রাখতে অতিরিক্ত চার কার্গো গ্যাস (এলএনজি) আমদানির চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রোজার মাসের জন্য ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার সরকার কুলিং লোড (এসির লোড) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লোডশেডিং সামাল দিতে চায়। গ্রীষ্মে কুলিং লোডের পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এসি তাপমাত্রা ২৫-২৬ রেখে তিন হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করতে চায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে টেলিভিশনগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। লোডশেডিং নানা কারণে হয়। টেকনিক্যাল কারণ ছাড়া লোডশেডিং যাতে না হয়, সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঘণ্টা প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের চিত্রে দেখা যায়, দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং হয়নি। ১ মার্চ প্রথম প্রহর রাত ১টার (শুক্রবার রাত) সময় বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার ৪৬৯ মেগাওয়াটের পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে এ রিপোর্টি লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ রাত সাড়ে ৭টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ২৫৮ মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ২৫৮ মেগাওয়াট। এ সময় ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে ৭৫৭ মেগাওয়াট, ত্রিপুরা দিয়ে আমদানি হয়েছে ৮০ মেগাওয়াট, ভারত থেতে ভেড়ামারা দিয়ে আমদানি হয়েছে ৮৭৮ মেগাওয়াট। দেশের গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হয়েছে চার হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট, তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে তিন হাজার ৪৮৩ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হয়েছে তিন হাজার ৫৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে বাস্তবতা হলো সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে সব সময় উৎপাদনসক্ষমতার কাছাকাছি চাহিদা দেখানো হয়। প্রকৃত চাহিদা ও উৎপাদনের চিত্র খুব কম তুলে ধরা হয়।