উচ্চশিক্ষায় বায়োটেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
উচ্চশিক্ষায় বায়োটেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা

খাদ্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিল্পসংক্রান্ত নানা প্রতিকূলতা নিয়ে জ্ঞানের যে শাখাগুলো কাজ করছে, সেগুলোর আধুনিকতম এক শাখা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি। শিক্ষা ও জ্ঞানে মানুষ প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে। সেই সঙ্গে আশপাশের পরিবেশকে নিজের অনুকূলে আনার জন্য সেসব জ্ঞানের ব্যবহারও বাড়ছে। বর্তমানে ‘বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’, ‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’ বা ‘বায়োটেকনোলজি’ নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি পড়ানো হয়। এ বিভাগের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক রিফা নাওয়ার

কী কী বিষয় পড়ানো হয়

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বিষয়ে সাধারণত চার বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম থাকে। প্রথম বছরগুলোতে মৌলিক বিষয়বস্তু, যেমনÑ কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ইন্ট্রোডাকশন টু বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি পড়ানো হয়। জ্ঞানের ভিত্তি গড়ে ওঠার পর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে। তখন তাদের পড়তে হয় প্রোটিন কেমিস্ট্রি, মেটাবলিজম, মলিকুলার বায়োলজি, ইমিউনোলজি, মাইক্রোবিয়াল জেনেটিকস, ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি, ভাইরোলজি, টিস্যু কালচার, সেল সিগন্যালিং, রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ টেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিকস, প্লান্ট বায়োটেকনোলজি, মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি, ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ইত্যাদি। এই বিষয়টিতে ল্যাবওয়ার্কের ওপর অনেক জোর দেওয়া হয়। যেহেতু এটি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট, তাই গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার ও ইনফরমেশন টেকনোলজিতেও কিছুটা প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করতে হয় শিক্ষার্থীদের, যা তাদের পরবর্তী সময়ে ভালো মানের গবেষক হতে সহায়তা করে।

জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল কেন পড়ব

জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশলের প্রয়োগ রয়েছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, শিল্পসহ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। ফলে এর চাহিদা বিশ্ববাজারে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত জাতের ফসল উদ্ভাবন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বিজ্ঞানের এই শাখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তি হয়ে উঠেছে। ক্যান্সার, বংশানুক্রমিক রোগ ও সংক্রামক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রোগ নির্ণয়ের জন্য আরটি-পিসিআর প্রযুক্তি থেকে শুরু করে নানা প্রতিষেধক তৈরি, এমনকি কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন নতুন মিউটেশন শনাক্ত করাÑ সবই ছিল জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশলের জয়জয়কার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রধান প্রযুক্তিগুলোর একটি হচ্ছে জৈব প্রযুক্তি। শিল্পক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন (Sustainable Development) সাধনে তাই জৈব প্রযুক্তির বিকল্প নেই।

চাকরির ক্ষেত্র কেমন

জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিস্তৃত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন, আইসিডিডিআরবি, আইডেশি- এসব প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে, যেখানে অনেক বাংলাদেশি গ্র্যাজুয়েট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা ও গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D), মান নিয়ন্ত্রণ (QC) এবং মার্কেটিং বিভাগেও রয়েছে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ভ্যাকসিন, সাফল্যের সঙ্গে রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন, ইনসুলিন, হরমোন ও অন্যান্য থেরাপিউটিক প্রোডাক্ট সফলভাবে উৎপাদন, বাজারজাত ও রপ্তানি করছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিষ্ঠিত।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন

জৈব প্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বহির্বিশ্বে একটি অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন বিষয়, তাই এই বিষয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বর্তমান সময়ে অগণিত। আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য ইংল্যান্ডের ওয়েলকাম স্যাংগার ইনস্টিটিউট প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, যেখানে বিজয়ীরা তিন মাসব্যাপী ওই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের স্কলারশিপ পেতে পারেন। এ ছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগও রয়েছে; যেমনÑ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম ৬০ ক্রেডিট শেষ করার পর বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন অফার পেলে স্থানান্তরিত হতে পারেন। মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার বিশাল সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক স্কলারশিপগুলোর মধ্যে জাপানের মনবুগাকুশো, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইরাসমুস মুন্ডুস ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে বিদেশ যাচ্ছেন, পড়াশোনা ও গবেষণা করে সেখানে স্থায়ী হচ্ছেন এবং অবদান রাখছেন বিজ্ঞানের নানা শাখার অগ্রযাত্রায়।

কোথায় পড়তে পারবেন

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। দেশের ১৭টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ও ৬টি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে পড়তে পারবেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামেও ভর্তির সুযোগ রয়েছে।