দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার
নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ভূমিকা খতিয়ে দেখছে সরকার। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের ভূমিকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও যাচাই করা হচ্ছে। যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঢালাওভাবে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসি বা অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান গতকাল বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের কাউকে ওএসডি, কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, যারা অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আছে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা এবং নিজস্ব ব্যবস্থায় যদি দেখা যায় ঘটনা সত্যিই ঘটেছে, শুধু সেই অভিযোগগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে। এটা সাধারণীকরণ করা হবে না। যাদের নামে অপপ্রচার আছে বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন বা এ ধরনের কিছুই করেননি, সাময়িকভাবে ওএসডি হয়েছেন, তারা খুব সাধারণ জীবনযাপন করবেন, এতে কোনো সমস্যা না। এখানে সরকারের পক্ষপাত নেই। সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজটি করবে, যাতে একজনও নিরীহ কর্মকর্তার কোনো অসম্মান না হয়।’
২০২৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক ডিসিদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে পুরো তালিকা
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো আসার পর বিবেচনা করা হবে। চারজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিতে এগুলো বিশ্লেষণ করা হবে এবং তা ধীরেসুস্থে হবে। পক্ষপাত বা কোনো কিছুর বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। সব সিদ্ধান্ত হবে নিয়ম-নীতির মাধ্যমে। একজন কর্মকর্তাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটি দেখা হবে।’
একটি নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রের অনেকগুলো সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখে। ডিসি তথা রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া সবই তার কাজ। প্রাথমিকভাবে রাতের ভোট হিসেবে পরিচিত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী ডিসিদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে তাদের একটা বড় অংশ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হয়েছেন। চাকরির বয়সকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া বিবেচনায় রেখে ২০১৪ সালে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্য থেকে ২২ জনকে বৃহস্পতিবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিতর্কিত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সব কর্মকর্তার ভূমিকাই খতিয়ে দেখছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
গেল তিনটি নির্বাচনের পরপর ভোট কারচুপির মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার অভিযোগ আসে। পরাজিত প্রার্থী ও দল এ অভিযোগ করলেও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও আছে।
এদিকে নতুন শিল্পসচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি অনুবিভাগ) মো. ওবায়দুর রহমান। এ ছাড়া দুয়েক দিনের মধ্যে আরও ৯ জনকে সচিব পদে শূন্য থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, চারটি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় সচিব পদের জন্য ১২ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই যোগ্য ও বঞ্চিত। তাদের মধ্যে কেউ চুক্তিতে নন। চাকরিতে কর্মরতদের মধ্য থেকেই সচিব করা হচ্ছে।