ভাষার শক্তি গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণ

কাজল রশীদ শাহীন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ভাষার শক্তি গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণ

জুলাই-আগস্টের দিনগুলোর সাহসী স্লোগানগুলো কি কখনও ভুলতে পারবে এ জাতি? বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্বাপর ঘটনাবলির দীপ্র উচ্চারণ মিশে আছে যেসব স্লোগানে, সেসব কি ভোলা সম্ভব হয়েছে? হয়নি, সম্ভবও নয় কখনোই। এখানেই ভাষার শক্তি, যে কোনো আন্দোলন-মিছিলের সাহস ও সৌন্দর্য, গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণ। ভাষার শক্তিতে কোনো সমাজ যখন জেগে ওঠে, তখন সে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়; যেমনটা দেখা গেছে বায়ান্নয়, ঊনসত্তরে, একাত্তরে, নব্বইয়ে এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়/ বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘লেগেছে লেগেছে/ রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘দালালি না রাজপথ/ রাজপথ রাজপথ’, ‘জাস্টিস জাস্টিস/ উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনিরা কেন বাইরে’, ‘যে হাত গুলি করে/ সে হাত ভেঙে দাও’, ‘আমার সোনার বাংলায়/ বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত/ আরও দেব রক্ত’ কিংবা ১৬ জুলাই সাঈদ মারা যাওয়ার পর যেসব স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ ‘আমার খায়, আমার পরে/আমার বুকেই গুলি করে’, ‘লাশের ভেতর জীবন দে/ নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ছি ছি হাসিনা/ লজ্জায় বাঁচি না’। এ রকম অগণন স্লোগানে মুখরিত ছিল জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো। এই আন্দোলনের প্রাণ বা শক্তিই ছিল এসব স্লোগান, যা কেবল ভাষা দিয়েই প্রকাশ করা সম্ভব।

অগণন সব স্লোগানের মধ্যে আমরা যদি প্রতীকী হিসেবে একটি স্লোগান নির্বাচন করি, কেমন হয়? স্লোগানটি হলো, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়/ বুক পেতেছি গুলি কর’। বুকের ভেতরের এই যে ঝড়, তা কি ভাষা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বোঝানো সম্ভব? চিকিৎসাবিজ্ঞানেও কি এই ঝড় শনাক্ত করা সম্ভব? কোনোভাবেই নয়। কিন্তু এ কথা তো সর্বাংশে সত্য, বুকের ভেতর একটা ঝড় উঠেছে। এই ঝড়কে ধরা যায়, বোঝা যায় কেবল ভাষার আশ্রয়েÑ ভাষার নিরিখে। ভাষা দিয়েই গ্রেপ্তার করা সম্ভব এই ঝড়। ছবি এঁকেও হয়তো হয়, কিন্তু তা কি যথার্থভাবে সেই ঝড় হাজির করে? করে না, করতে পারে না। তা ছাড়া ছবি তো ভাষার একটা মাধ্যম, যাকে আমরা বলতে পারি মনের ভাষা। এ কারণে ভাষাই মুখ্য। ভাষা আছে বলেই মানুষ ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার লড়াইটা জারি রাখতে পারে। ভাষার অনন্যতা, অনিবার্যতা এখানেই। বিশেষ করে, তা দিয়ে যখন প্রগাঢ়ভাবে কোনো কিছু উপস্থাপন করা হয়।

আমরা আলোচনার সুবিধার্থে আরও কিছু স্লোগান হাজির করতে পারি, যেগুলো ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। এগুলো হলোÑ ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’; ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা/ দেশটা কারও বাপের না’; ‘এই দুই তিন চার/ শেখ হাসিনা গদি ছাড়’। এসব স্লোগান যখন ছাত্রদের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে শুরু করল, তখন একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠল, এই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আর বেশিদিন নেই। কারণ ভাষার শক্তিতে কোনো সমাজ যখন জেগে ওঠে, তা দমিয়ে রাখা কারও পক্ষে আর সম্ভব হয় না। আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি তার অমর-উজ্জ্বল সাক্ষী।

ভাষার নিজস্ব একটা শক্তি রয়েছে। এ শক্তির কাছে পৃথিবীর সব শক্তি গৌণ। এ কারণে মনে করা হয়, মানুষ যেদিন ভাষা আবিষ্কার করেছে বা ভাষাকে গ্রেপ্তার করেছে, সেদিনই পৃথিবীর যাত্রা শুরু হয়েছে। ব্ল্যাকহোলের আরেক নাম কি তা হলে ভাষা? ইব্রাহামীয় ধর্মগুলোয় আদম ও হাওয়া কিংবা অ্যাডাম ও ঈভের কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, গন্ধম ফল খাওয়ার অপরাধে পৃথিবীতে এসেছেন। আজকের মনুষ্যসমাজ উনাদেরই উত্তরসূরি। অনেকে মনে করেন, এ গন্ধম ফল আসলে ভাষা আবিষ্কারের নাম। এ কাহিনির জন্মলগ্নে ভাষা নিয়ে গবেষণা না হওয়ায় ভাষার শক্তি ও ক্ষমতা চিহ্নিত করা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে উনারা যখন ভাষাটা রপ্ত করেন, তখনই পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মানুষের পৃথিবীতে আগমন হয়েছে ভাষা জানার কারণেই। ধর্মশাস্ত্রের এ কাহিনি আমরা যদি কেবল ভাষার দৃষ্টিতে দেখি, তাহলেই বোঝা যায় ভাষার শক্তি ও তাৎপর্য, সাহস ও সৌন্দর্য, যা প্রতীয়মান হলো, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোয়ও।

ভোটাধিকার হরণ দীর্ঘদিন ধরে চলছিল এ দেশে, বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর থেকে। সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সুবিধাভোগীরা ছাড়া রাজনৈতিক দল-সামাজিক সংগঠনসহ সবাই এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো ফ্যাসিস্ট যেন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেনতেন প্রকারে করে ফেলায় হতাশা দ্বিগুণ হয়। দেশটা দীর্ঘমেয়াদি এক ফ্যাসিস্টের কবলে পড়ে গেল বলে মনে হয়, যেখান থেকে মুক্তির পথ সহসা পাওয়া যাবে, এমন সম্ভাবনা নেই। যদিও নানা যুক্তিও হাজির করা হচ্ছিল; কেউ বলেন ছয় মাস, কেউ বলেন বড়জোর দু’বছর, কেউ বলেন ২০৩০ সালে এ সরকারের পতন হবে। কিন্তু আশাবাদী হওয়ার মতো সে রকম কোনো ভাষা তৈরি হচ্ছিল না বলে কোনোটায়ই প্রতীতি রাখা যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে সর্বনাশা কিছু কথাও শোনা যাচ্ছিল। কাঁটাবনের আড্ডায় কান পাতলেও শুনতে পাচ্ছিলাম সেসব আলাপসালাপ। দেশে চীনের মডেলে একদলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম হতে যাচ্ছে। একদলকেন্দ্রিক গণতন্ত্রের মডেল হাজির করা হবে এখানে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আঁতকে উঠেছিলাম এসব শুনে। চীন আর বাংলাদেশ যে এক নয়, কে তাদের সে কথা বোঝাবে? এই যে আমার নিজস্ব একটা পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, বোঝাপড়াÑ এসবও কিন্তু আমার ভেতরে তৈরি হয়েছে ভাষার কারণেই। আমি চীন ও বাংলাদেশের ভূগোল সম্পর্কে যতটুকু জানি, তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, প্রকৃতি-পরিবেশ, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে যে অধ্যয়ন, তাতে কখনোই মনে হয়নি চীনের মতো করে এখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, ছদ্মবেশী গণতান্ত্রিক মডেল কায়েম করা সম্ভব হবে। তবে ভয় ছিল। কারণ ফ্যাসিস্ট সরকার ভাষা তৈরির চেষ্টা করছিল। কিন্তু শেষাবধি ওরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। কারণ ফ্যাসিস্টের আগেই ছাত্র-জনতা নতুন ভাষা নিয়ে হাজির হয়, যে ভাষা সারাদেশের মানুষকে এক সূত্রে গেঁথে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করে।

এখানেই ভাষার শক্তি, ভাষা সমগ্রকে যত সহজে সম্মোহন করতে পারে, তার তুলনা আর কিছুতে নেই, যা আমরা দেখেছি ৩৬ জুলাই পর্যন্ত। অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময় দেখা গেল, নতুন ভাষার জন্ম হচ্ছে। ছাত্ররা হরতাল, অবরোধের জায়গায় হাজির করল নতুন শব্দবন্ধÑ ‘বাংলা ব্লকেড’, ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’, ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’, ‘মার্চ ফর ঢাকা’, যা দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ও একাকার হতে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জনতাকেও যুক্ত করে। ছাত্রদের মাধ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলন হয়ে উঠল সবার আন্দোলন।

ভাষার এই শক্তি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল অনেক আগেই। চর্যাপদে তার নজির রয়েছে। চর্যাপদের কবি ভুসুকু বলেছেন, ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালি ভইলি’। বাঙালি কবি আবদুল হাকিম তো সেই মধ্যযুগেই বলেছেন, ‘দেশী ভাষা যার মনে ন জুয়ায়/নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়’। ভাষার শক্তি আমরা দেখেছি পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই। গত শতাব্দীর বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাস্তায় ছাত্র-জনতা যে জীবন দিল, তার উৎস তো ভাষার শক্তি থেকেই উৎসারিত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ওই শক্তিগুণেই।

আরও পড়ুন:

টনক নড়বে কি

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান সফল হতে যাচ্ছেÑ এটা আঁচ করা গেছে তখনই, যখন দেখা গেল আন্দোলন ঘিরে ছাত্ররা নতুন স্লোগান তৈরির পাশাপাশি বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, নব্বইয়ের স্লোগান হাজির করছে সময়ের প্রয়োজন সাপেক্ষে। কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রেও তারা হাজির করছে নতুন নতুন শব্দ। এই যে ভেতর থেকে জেগে ওঠা, সমগ্রর আকাক্সক্ষা ধরতে পারা, এসব তখনই সম্ভব হয়, যখন ভাষার শক্তি প্রাণ পায় মানুষের হৃদয়ে।

ভাষার শক্তি কীভাবে প্রভাবিত করে আমাদের, তার একটা উদাহরণ দিই সিন্ধু অপ্রতীমের গল্প দিয়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোয় বাসায় তখন আমরা তিনজন। এর মধ্যে হাউস টিউটর হওয়ায় সিন্ধুর মাÑ নীলিমা আফরোজকে হলে যেতে হয়েছে, রাত-দিনের যে কোনো সময়ে। আমি আর সিন্ধু বাসায় থেকেছি। সিন্ধুও আমাদের উদ্বেগ আর শঙ্কার সঙ্গী হয়েছে। এর মধ্যেই এক রাতে আশ্চর্যজনক এক ঘটনা ঘটল। সিন্ধুÑ সিন্ধু অপ্রতীম একেবারে ছোট থেকে, ছয় কিংবা সাত হওয়ার পরপরই বলত ক্রিকেটে ওর প্রিয় দল অস্ট্রেলিয়া। একসময় প্রিয় দেশের জায়গাও করে নিল অস্ট্রেলিয়া। অথচ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশ হলে আমেরিকা ও কানাডা অগ্রাধিকারে থাকার কথা। কারণ ওখানে ওর মামা-চাচা থাকেন। কিন্তু না, অজ্ঞাত কারণে তেমনটা হয় না।

মনে পড়ে, তখনও ওর বয়স দশ হয়নি। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কথা বলে হঠাৎ খেয়ালে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় যাবে বলে জানায়। বাংলা ভাষা নয়, ইংরেজি ওর প্রিয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজি সাহিত্যের বই সংগ্রহ করে, পড়ে। ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ থেকে ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টে’র মতো বই এই তালিকায় যুক্ত হয়। ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ এসব ভাষা শিখতে চায়, ভায়োলিন বাজায়। ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করে, নোট নিয়ে চরিত্র নির্মাণ করে। সেই সিন্ধু আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার এক দিন পর ১৮ জুলাইয়ের রাতে এক আশ্চর্যজনক ঘটনার জন্ম দেয়। রাত তখন ১টা হবে। ও একটা কবিতা লিখে নিয়ে আসে, সঙ্গে ছবি আঁকা। লেখাটা এ রকম : ‘উঠবো আকাশে/ নামবো পাহাড়ে/ পৃথিবী/ জন্মেছিই এই দেশে/ কী হয়েছে/ তাহলে তোমার/ বাংলাদেশে?’ ছবিতে ও আকাশ, পাহাড়, উড্ডীন পতাকার পাশাপাশি প্রকৃতি এঁকেছে পুরো পৃষ্ঠায় আর নিচের থেকে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে একদল তরুণ মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; এরই মধ্যে রচনা করেছে ওই কয়েক পঙ্ক্তি। শুধু লিখেই ক্ষান্ত হয়নি। ওর মাকে, আমাকে এসব দেখানোর পর বলছে, আমি কখনও বাংলাদেশ ছেড়ে যাব না। ইতিহাস হয়তো সিন্ধুর এ কথা জানবে না কোনোদিন কিন্তু ওর এ কথার মধ্যে কি ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নিহিত নেই? আছে নিশ্চয়। ওই সময়ের আন্দোলনের সব খবরাখবর, বিশেষ করে স্লোগান ও কর্মসূচি ওকে প্রভাবিত করেছে। ও ভাষার শক্তিতে নিজেই জেগে উঠেছে, নিজেকে চিনতে পেরেছে। সিন্ধুদের এই পরিবর্তন, জেগে ওঠার মধ্যেই রয়েছে আমাদের প্রত্যয় ও আশাবাদের জায়গা। এসবই নতুন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশের আগামী দিনের সম্ভাবনার বারতা, শহীদ আবু সাঈদের আত্মোৎসর্গের শক্তি।

মনে রাখতে হবে, শহীদ আবু সাঈদও আত্মোৎসর্গ করেছেন ভাষার শক্তিতে। আবু সাঈদ, মারা যাওয়ার আগে গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন জোহা স্যারের অভাব। কায়মনে চেয়েছিলেন উনার উপস্থিতি। মৃত্যুর আগের দিন ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার’।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই ছাত্র মৃত্যুর আগে হন্যে হয়ে তালাশ করেছিলেন একজন শামসুজ্জোহাকে, কেন? কারণ উনার প্রত্যাশা ছিল, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে কেউ একজন রচনা করবেন নতুন ইতিহাস। হয়ে উঠবেন এই সময়ের জোহা স্যার! আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন, ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো যাবে না, যদি চালানো হয়, তা হবে আমার রক্তের ওপর দিয়ে। ’৬৯-এর অভ্যুত্থানের সময় যেমনটা বলেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক প্রক্টর মুহম্মদ শামসুজ্জোহা।

কিন্তু না, সেই স্ট্যাটাসেও সাড়া মেলেনি কারও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, দেখা মেলেনি সাঈদের-ছাত্রদের আকাক্সিক্ষত শামসুজ্জোহা স্যারের। কোনো শিক্ষক, লেখক, কবি, সাহিত্যিক কেউই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। এই অভাববোধ, খেদ থেকেই সাঈদ যেন নিজেই হয়ে উঠলেন একজন শামসুজ্জোহা। রচনা করলেন অমর এক ইতিহাস, যে ইতিহাস আমাদের স্মরণ করাবে ’৯০, ’৮৭, ’৭১, ’৬৯, ’৫২-র রক্তঝরা দিনগুলোর মতো ২০২৪-কেও। শহীদ আবু সাঈদ বাংলা ভাষার শক্তির পুণ্য নাম, গণ-অভ্যুত্থানের প্রাণ।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সাংবাদিক