গণপদযাত্রা, পানিতে নেমে লাখো মানুষের প্রতিবাদ

আমাদের সময় ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গণপদযাত্রা, পানিতে নেমে লাখো মানুষের প্রতিবাদ

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সেøাগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ বুধবার সকাল ১০টায়। গতকাল মঙ্গলবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গণপদযাত্রা ও হাঁটুপানিতে নেমে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি তিস্তা পাড়ের লাখে মানুষ ভারতীয় এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানায়। কর্মসূচিতে শুধু ক্ষোভ নয়, জেগে উঠেছে আশার আলোও। মানুষের চোখে-মুখে লড়াইয়ের দৃঢ়তা। তিস্তা নদী রক্ষার এই আন্দোলন যেন শুধু একটি নদীর জন্য নয়, বাংলাদেশের প্রকৃতি, কৃষি ও মানুষের জীবিকার লড়াই। তিস্তা আবারও প্রাণ ফিরে পাবে- এমন প্রত্যাশা নদীর দুই পাড়ের মানুষের। আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে রংপুরের পাঁচ জেলার ১১টি স্থানে লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জের দুটি স্থান ও আদিতমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর, নীলফামারীর ডিমলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় একযোগে চলছে। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর নেতৃত্বে গণপদযাত্রায় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তিস্তা সেতু থেকে পদযাত্রাটি কাউনিয়ায় আসে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসার নেতৃত্বে বিএনপির রংপুরের নেতাকর্মীরা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে স্থানীয় শিশু, কিশোর, নারী ও পুরুষ এতে অংশ নেয়। পদযাত্রা শেষে দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া মহিপুর ব্রিজসংলগ্ন তিস্তা নদীতে নেমে প্লাকার্ড প্রদর্শন করে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।

এর আগে গত সোমবার কাউনিয়া তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন পয়েন্টে তিস্তা বাঁচানোর ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিস্তার দুই তীরে ১১ পয়েন্টে একযোগে দিনভর নানান আয়োজনে প্রথম দিন অতিবাহিত করে তাঁবুতেই রাত যাপন করে হাজার হাজার মানুষ। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে আয়োজক কমিটি। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নদীর দুই পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিস্তার করুন দৃশ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল দিনভর অনুষ্ঠিত হয় হা-ডু-ডু, দারিয়াবান্ধাসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলা। এ ছাড়া ঘুড়ি ওড়ানো, ভাওয়াইয়া, পালা, জারি, শারি গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চায়ন হয়। এ দিনের কর্মসূচিতে

সকাল থেকেই কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর তীরে নামে লাখো মানুষের ঢল। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কাউনিয়া তিস্তা রেলসেতু ও গঙ্গাচড়ার মহিপুর সেতু এলাকা। বিকাল ৫টায় অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চায়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্ট খুনি স্বৈরাচারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এ স্বৈরাচার একদিন বলেছিল- ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা (ভারত) সারাজীবন মনে রাখবে। তাই ভারত শুধু স্বৈরাচারকে মনে রেখেছে বাংলার মানুষকে মনে রাখেনি। তিস্তার ন্যায্য পানি আদায়ের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ পানিবণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করছে। ৫০ বছর ধরে ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়নি। তারা যদি তিস্তার ন্যায্যতা না দেয় তাহলে তাকিয়ে থাকা যাবে না। আমাদেরটা আমাদেরই চিন্তা করতে হবে। সম্পর্ক আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য যেসব নদী আছে, সেগুলো পুনরায় সংস্কার এবং খনন করা হবে।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এই জনপদের প্রাণের দাবির এ আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে লাখো মানুষ যোগ দিয়েছে। আকাক্সক্ষার এ দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভাটির দেশ নদীর পানির মালিক। ভারতের আগ্রাসনে তিস্তা এখন আর নদী নেই, খাল বলা যায়। তিনি বলেন, সংস্কারের জারি গান মানুষ আর খায় না। সংস্কার করার ক্ষমতা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। প্রয়োজনে ঐক্যমত্যভাবে গণস্বাক্ষর করে রাখা যেতে পারে। যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারা জনগণের কাক্সিক্ষত সংস্কারগুলো করবে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের কাছে অর্পণ করুন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিস্তার পানির কারণে দেশে প্রতি বছর ১৫ লাখ টন চাল কম হচ্ছে। যে কোনো প্রক্রিয়ায় তিস্তাকে জীবিত করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। উন্নয়নের রাজনীতির পাশাপাশি উৎপাদনের রাজনীতি করতে হবে। তারেক রহমান তিস্তার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষকে জাগ্রত করেছে। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন মনে করিয়ে দেয় দেশনেত্রীর কথা। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও- এখন আমরা বলছি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও।

স্থানীয় তরুণ মুশফিকুর রহিম বলেন, জন্মের কিছুদিন পরই বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটা তিস্তার ভাঙনে নিঃশেষ হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু আবাদের জমি আছে, সেই জমিতে ফসল হচ্ছে না পানির অভাবে। আমরা বহমান তিস্তা দেখতে চাই। পানিতে নেমেছি ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদ করতে। এর জন্য যতদিন লাগে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের শেষ দিনের অবস্থান কর্মসূচি উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাসান রাজিব প্রধান, আলমগীর সরকার, মোশাররফ হোসেন, আফজাল হোসেন মিয়া, হায়দার আলী মিঞা, ওবায়দুর রহমান বুলবুল, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, শফিকুল ইসলাম, হাসিবুর রহমান হাসিব, সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, আ খ ম আলমগীর সরকার, জহুরুল আলম, ডা. মইনুল হাসান সাদিক, মাহমুদুর ন্নবী টিটুল, ডা. জিয়াউল হক জিয়া, বাবুল আহম্মেদ, মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক প্রমুখ।