বালুবাণিজ্যে আওয়ামী লীগ নেতার পার্টনার বেয়াই

হাসান মাহমুদ শাকিল, লক্ষ্মীপুর
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বালুবাণিজ্যে আওয়ামী লীগ নেতার পার্টনার বেয়াই

আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মেম্বার তার বেয়াই বাদশা মোল্লাকে পার্টনার করে রমরমা বালুবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ অবৈধ ব্যবসার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কার্যক্রমে পরিচালিত লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় রহমতখালী চ্যানেলের স্লুইসগেটটি (রেগুলেটর)। রেগুলেটরের গাইড ওয়ালের সঙ্গেই বাল্কহেড ও ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু ব্যবসার কারণে এ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। স্লুইসগেটের ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো নৌযান রাখা যাবে না আইন রয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রায় ১৫ মিটারের মধ্যেই বাল্কহেড ও ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালুর ব্যবসা করে আসছে তারা।

রেগুলেটর এলাকার ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে বালুর বাল্কহেড ও নৌযান রাখার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ লিখিত নোটিশ দেন। নোটিশটি পাউবো পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ ১২টি দপ্তরে দেওয়া হয়। বলা হয়- মধ্য চর রমনীমোহন মৌজায় মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় বাপাউবোর মালিকানাধীন ভূমিতে দুটি ১৪-ভেন্ট রেগুলেটর রয়েছে। এগুলো বৃহত্তর নোয়াখালীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচকাজে ব্যবহার হয়।

অভিযুক্ত বাবুল সদর উপজেলার চর রমনীমোহন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি।

আইন জেনেও তা অমান্য করার ঘটনা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসায়িক অংশীদার ও বেয়াই বাদশা মোল্লা। প্রায় আড়াই মাস আগে প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দিলেও তারা ড্রেজিং মেশিন ও বাল্কহেড বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গেট থেকে প্রায় ১৫ মিটারের মধ্যেই একটি ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে দুটি বাল্কহেড থেকে বালু বহন করা হচ্ছে। পাশেই ৫টি বালুবাহী বাল্কহেড নোঙর করা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রেগুলেটরের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের পানি রহমতখালী খালে দেওয়া হয়। ওই পানি সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নসহ নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখন গেট খুলে দিলেও নাব্যতা সংকটের কারণে জোয়ারের পানি খালে পর্যাপ্ত যাচ্ছে না। ফলে চাষাবাদের জন্য সেচের পানি পাচ্ছে না কৃষক।

এ ব্যাপারে বাবুল মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বাদশা মোল্লা মোবাইল ফোনে জানান, ১৩ বছর ধরে স্লুইসগেট এলাকায় বাল্কহেড এনে ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে বালু ব্যবসা করে আসছেন। মাসে প্রায় ৪ লাখ ঘনফুট বালু এখান থেকেই স্থানান্তর করা হয়। গেটের ১০০ মিটারের মধ্যে বাল্কহেড ও ড্রেজিং মেশিন বসানো যাবে না আইন তারা জানে। তাদের দাবি, এতে স্লুইসগেটের কোনো ক্ষতি কিংবা নাব্যতা সংকটও হচ্ছে না। প্রায় আড়াই মাস আগে প্রশাসনের লোকজন ড্রেজিং মেশিন ও বাল্কহেড সরিয়ে নিতে বলেন। এরপর অবশ্য কেউ কিছু বলেননি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ-জামান খান বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে জোয়ার এ এলে রেগুলেটরের গেটগুলো বন্ধ রাখা হয়। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের পানির জন্য জোয়ারের সময় গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু গেট এলাকায় বালুবাহী বাল্কহেডগুলোর কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে জোয়ারের সময় গেট খুললে পর্যাপ্ত পানি যাচ্ছে না খালে। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেব।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত সাহা ঘটনাস্থল গিয়ে সংশ্লিষ্টদের স্লুইস গেট এলাকা থেকে ড্রেজিং মেশিন ও বাল্কহেড সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়। এরপরও কেন সরাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে বাল্কহেড মালিক-সমিতির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।