৭৮১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নাসার নজরুলের

সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে দুদকের ৩ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
৭৮১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নাসার নজরুলের

৭৮১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৪৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমিল্লা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, তার স্ত্রী মাহমুদা আখতার এবং ছেলে মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়ার

নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিজ নামে ঢাকার গুলশান অ্যাভিনিউ রোডে ১৪তলা ভবন, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৩তলা ভবন, নিউ ডিওএইচএসের লেক রোড-১৮-এ দোতলা বাড়ি, একই রোডে আরেকটি ৪তলা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাবর সম্পদ রয়েছে, যার মূল্য ৫৩২ কোটি ৮৭ লাখ। তার নামে এক্সিম ব্যাংকের ৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার এবং নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদারের অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ৫৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে নাসা গ্রুপের কর্ণধারের ১ হাজার ১৩২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম মজুমদারের দায়-দেনা ২৯৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। দায়-দেনা বাদ দিয়ে তার নিট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৮৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০০৫-০৬ করবর্ষে তার নিট সম্পদের মূল্য ছিল ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০০৫-০৬ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত নজরুল ইসলাম মজুমদারের গ্রহণযোগ্য মোট আয় ৪২২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ, পারিবারিক খরচসহ তার অন্যান্য ব্যয় ছিল ৩৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বৈধ উৎস থেকে সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৫১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম মজুমদারের ‘জ্ঞাত আয়ের’ বাইরে অর্জিত সম্পদের মূল্য ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৪৫৪ টাকা, যা তিনি নিজের দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার আগে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ অগাস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হয় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ। বিএবির নেতৃত্বও হারান নজরুল। ব্যাংক খাতের আলোচিত নাম নজরুল ইসলাম ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমিল্লা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানান, সুবিদ আলী ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া ২২টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮১ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ২৫৫ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অন্যদিকে সুবিদ আলী ভূঁইয়ার স্ত্রী মাহমুদা আখতার স্বামীর সহায়তায় ১ কোটি ৮৩ লাখ ১৮ হাজার ১০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া নিজের নামের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২টি ব্যাংক হিসাবে ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১৪ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৮২০ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়াও মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া নিজ নামের এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১০৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৭ টাকা এবং ১০ হাজার ৩২৮ মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক ও মানিলন্ডারিং আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনের ধারায় তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।