ফেব্রুয়ারিতেও ম্লান ফুলের বাণিজ্য
বছরজুড়ে কমবেশি ব্যবসা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ফুলের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই অনেক বেশি থাকে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিয়েশাদিসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কারণে এ মাসে ফুল ব্যবসায়ীদের বড় বাণিজ্য হয়। তাই এই মৌসুম কেন্দ্র করে ফুলচাষি থেকে শুরু করে পাইকারি, খুচরা ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের আলাদা বিনিয়োগ ও প্রস্তুতি থাকে। এ বছরও ফুলের ভালো উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের একদিন আগেও রাজধানীর বাজারে জমে উঠেনি ফুলের বাণিজ্য। ফুলের দোকানগুলো নানা রঙের ফুলে সেজে উঠলেও হাসি ফোটেনি ব্যবসায়ীদের মুখে।
বছরের পুরোটা সময়জুড়ে রাজধানীর শাহবাগ ফুল বাজারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুলের সমারোহ থাকে। তবে গতকাল সরেজমিন গিয়ে গেছে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আলাদাভাবে ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে বাজারটি। ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুলের আমদানি বাড়িয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক দোকানে আলাদা করে ক্রেতাদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা জাতের গোলাপের বাহারি সংগ্রহ। কারণ এ দিন গোলাপের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এবার ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেকটাই কম দেখা গেছে। এমনকি গোলাপের দাম অন্যবারের চেয়ে কম থাকা সত্ত্বেও বিক্রির দেখা পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা।
এই বাজারের মৌ পুষ্পালয়ের কর্ণধার এনামুল হক কলি বলেন, এবার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। ভালোবাসা দিবসের আমেজ নেই। বেচাবিক্রিও নেই। ১২, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘিরে আলাদা বিনিয়োগ থাকে আমাদের। এবার পুরোটাই লোকসান যাবে মনে হচ্ছে। একই কথা জানান মুক্তা পুষ্পবিতানের কর্ণধার আব্দুস সবুর। তিনি বলেন, এবার ভেলেন্টাইনস ডের বাণিজ্য পুরাই ‘বরফ ঠা-া’। এবার ফুলের বাজার ও দাম নিয়ে এখানকার
ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যবারের চেয়ে এবার দাম অনেক কম। এবার পাইকারিতে মিরিন্ডা গোলাপের বান্ডেল (১০০ পিস) ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চায়না গোলাপের বান্ডেল ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা কেনা পড়ছে, যা গত বছরের চেয়ে অনেক কম। খুচরায় এবার মিরিন্ডার পিস ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছর যা ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি। চায়না গোলাপের পিস গতবার যেখানে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, এবার তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তার পরও বিক্রি অনেক কম।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এখানকার ভাসমান ফুল বিক্রেতা শেফালি আক্তার বলেন, প্রত্যেকবার ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপের বান্ডেল কিনি। বিক্রিও ভালো হয়। এই দুদিনে কিছু টাকায় বাড়তি আয়ও হয়। এবারও গোলাপ কিনছি। কিন্তু এইবার বিক্রি নাই। কালকে (শুক্রবার) ফুলগুলো বিক্রি করে শেষ না করতে পারলে লোকসান হয়ে যাবে।
সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে শাহবাগের ফুলের বাজারে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হয়। এবার ৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আমার দোকানেই দেড় লাখ টাকা আলাদা বিনিয়োগ করেছি। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার টাকাও উঠেনি। ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুলের বিক্রি অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা। আগামীকালও (১৪ ফেব্রুয়ারি) যে বিক্রি খুব একটা বাড়বে, সেটি মনে হচ্ছে না।
সারাদেশে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ২৬টি সংগঠনের সম্মিলিত কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি’। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইমামুল হোসেনও জানান, অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসসহ আগের তিন দিন ধরে রাজধানীর আগারগাঁও ও শাহবাগ ফুলের বাজারে বড় বাণিজ্য হয়। কিন্তু চলতি ফেব্রুয়ারিতে পুরোই উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। এ সময় বিয়েশাদিরও অর্ডার থাকে। এবার সেটাও অনেক কমে গেছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির হিসাবে, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন কেন্দ্র করে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসে ব্যবসার পরিস্থিতি বিবেচনায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হবে না বলে ধারণ করছে সংগঠনটি।
ইমামুল হোসেন বলেন, এবার ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে পবিত্র শবেবরাতও পড়েছে। তা ছাড়া দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও অনেকটা অস্থিতিশীল রয়েছে। ফুলের বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে অনেক বড় বড় বিয়ের আয়োজনের অর্ডার পাওয়া যায়। সেটিও এবার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। সব মিলিয়ে এবার ফেব্রুয়ারি ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হবে কিনা সেটি অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম