আজ বসন্ত ভালোবাসার দিন

অদ্বৈত মারুত
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আজ বসন্ত ভালোবাসার দিন

আজ পহেলা ফাল্গুন। শিমুল, পলাশ, অশোক বন তাই আগুনরঙে রঙিন। ঋতুরাজ বসন্ত আজ এলো সন্ত হয়ে গুহা অভিমুখী উত্তরের হাওয়ার তীব্রতা তাড়িয়ে। প্রকৃতি যেন আজ দখিনা হাওয়ায় রবীন্দ্রনাথের গানের মতোই হৃদয় নাচায়, ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয় হৃদয়ে-হৃদয়ে- ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,/ সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল-/ কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।’

বসন্ত এলো প্রকৃতিতে নিজস্ব উষ্ণতায় প্রাণ সঞ্চার করে। বসন্তের আগমনে আড়মোড়া ভেঙে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে আজ সজীব। বসন্তের আগমনধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে গাছের নতুন কুঁড়িতে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্বাগত জানাচ্ছে- আজ বসন্ত। তবে এই ঋতু ফাল্গুন ও চৈত্রের ভেতর লুকিয়ে থাকলেও অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। বাংলা বছর গণনায় ফাল্গুন ১১তম মাস হলেও কালের আবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহে এটি শুধু একটি মাসের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পরিণত হয়েছে বাঙালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসবে। এ উৎসব বাংলার যেমন গৌরবময় ঐতিহ্য, তেমনি বাঙালিসত্তা।

শুরুটা করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবর। ১৫৮৫ বঙ্গাব্দে তিনি বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকেন্দ্রিক চৌদ্দটি উৎসবেরও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে ‘বসন্ত উৎসব’ একটি। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরন এখনকার মতো ছিল না। ব্যাপকভাবে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয় ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে। এ উৎসব এখন আমাদের জাতীয় উৎসবও।

কালে কালে এই ঋতুকে কবি-সাহিত্যিকরা রাঙিয়েছেন নানাভাবে। মধ্যযুগের বাঙালি কবি আলাওল বসন্তকে দেখেছেন ‘কামের ঋতু’ হিসেবে। ঋতু-বর্ণন কাব্যে লিখেছেন, ‘মলয়া সমীর হৈলা কামের পদাতি।/ মুকুলিত কৈল তবে বৃক্ষ বনস্পতি॥/ কুসুমিত কিংশুক সঘন বন লাল।/ পুষ্পিত সুরঙ্গ মল্লি লবঙ্গ গুলাল॥/ ভ্রমরের ঝঙ্কার কোকিল কলরব।/ শুনিতে যুবক মনে জাগে মনোভব॥’

রবীন্দ্রনাথ তো বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গান ও কবিতা। শুধু বসন্তপর্বের গানই তিনি লিখেছেন আটানব্বইটি। বসন্তকে বিচ্ছেদের ঋতু হিসেবেও বর্ণনা করেছেন কোনো কোনো লেখক। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এ, ‘ কোকিলের ডাক শুনিলে কতকগুলি বিশ্রী কথা মনে পড়ে। কী যেন হারাইয়াছি। যেন তাই হারাইয়া যাওয়াতে জীবনসর্বস্ব অসাড় হইয়া পড়িয়াছে। যেন তাহা আর পাইব না। যেন কী নাই। কেন যেন নাই। কী যেন হইল না। কী যেন পাইব না। কোথায় যেন রত হারাইয়াছি।’

বসন্ত জাগরণের ধ্বনিও। কখনও ধারণ করে রুদ্রমূর্তি; দ্রোহের প্রতিমূর্তি হিসেবে বর্ণনা পাই জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’-এ। বসন্ত তাই বাঙালিজীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনোভাবেই তাকে এড়ানো যায় না। যেমন গত কয়েক বছর ধরে এড়ানো যায়নি বিশ^ ভালোবাসা দিবসও। বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস একই সঙ্গে হাতে হাত ধরে এসেছে; প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিচ্ছে নানা ব্যঞ্জনায়। এ যেন ‘সুখের বসন্ত’-এ ‘সখীর হৃদয় কুসুম’।