বেনজীরে নতুন করে অস্বস্তিতে পুলিশ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ভার্চুয়াল বৈঠকে পুলিশে পৃথক প্লাটফর্ম তৈরি এবং পুলিশের ৯০ শতাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের দাবি করায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছেন বাহিনীর সদস্যরা। ভেঙে পড়া পুলিশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টার সময় এ ধরনের বিভেদ তৈরি করতে বেনজীর আহমেদ পরিকল্পিতভাবে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। এমন প্রেক্ষাপটে বেনজীরসহ পলাতক প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশের কারা যোগাযোগ করেছেন, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সরকার। সদর দপ্তরসহ পুলিশের পেশাজীবী সংগঠনগুলো বেনজীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এদিকে বেনজীরকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, কাদের সঙ্গে উনি (বেনজীর) যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, আমরা সব বিষয়ে নজরে রাখছি। আমরা আইন অনুযায়ী সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও দেশের নিরীহ সাধারণ পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যাননি। তারা নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এ সময় বেনজীরের বক্তব্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র। পুলিশকে আবারও ব্যবহার করার পাঁয়তারা করছেন বেনজীর ও তার সহযোগীরা। অনেক পুলিশ অফিসারকে তিনি আগের মতোই বিপদে ফেলে ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ পুলিশ আর কারও পাতানো ফাঁদে পা দেবে না। বেনজীরকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি করে সংগঠনটি।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেনজীর আহমেদের বক্তব্য পুলিশ সদস্যদের ক্ষুদ্ধ যেমন করেছে, তেমনি অস্বস্তিতেও ফেলেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মামলা তদন্ত ও অন্যান্য অপারেশনাল কাজে বর্তমান সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অহর্নিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনী যখন কাজ শুরু করেছে, তখন এই ধরনের বক্তব্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বেনজীর আহমেদ দাবি করেছেন, ৯০ শতাংশ পুলিশ আওয়ামী লীগের এবং তাদের নিয়ে তিনি প্লাটফর্ম তৈরির কাজ করছেন। এই বিষয়গুলো বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করছে। বেনজীরসহ পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী পুলিশ কর্মকর্তারাও বিপদে পড়তে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএসএস পুলিশ ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, বেনজীরের বক্তব্য পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সব সদস্যকে অত্যন্ত ‘ক্ষুব্ধ করেছে’। এ ধরনের সভায় অংশগ্রহণ এবং বক্তব্য দেওয়া দেশের বিরুদ্ধে ‘গভীর ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’। দুর্নীতির ঘটনায় সম্পৃক্ত ও দুদকের একাধিক মামলায় অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকা-ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেনজীরসহ পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে সরকারি একাধিক সংস্থা। বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামসহ যোগাযোগ অ্যাপসের গ্রুপগুলো নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এসব গ্রুপে কারা কী বিষয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা করছে, সেই বিষয়ে সোর্স ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে একাধিক সংস্থা। সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা ও আলোচনায় অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ইন্টারপোলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। এর আগে ৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে গত ১৫ ডিসেম্বর পৃথক চারটি মামলা করে দুদক।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়- বেনজীর ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তাদের বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এবং মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া দুই দফায় বেনজীর ও তার পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।