বন্দরকেন্দ্রিক অস্থিরতার নেপথ্যে কারা
মেয়রের হস্তক্ষেপে স্থগিত লকআউট
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবাহী আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইম মুভার শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয় গত শুক্রবার। পরদিন শনিবার ৪৮ ঘণ্টার লকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ১১ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়। আজ সোমবার থেকে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপে ২ মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন।
এদিকে হঠাৎ করেই বন্দরকেন্দ্রিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি উত্থাপনে কাজ বন্ধের ঘটনায় কোনো তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। হঠাৎ করে এসব সমস্যা সমাধান কিভাবে সম্ভব। এছাড়া ২০১৮ সালে হওয়া সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিও নতুন নয়।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া স্বৈরাচারের দোসর মালিক-শ্রমিকরা। তারাই মূলত নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করছে। এজন্য দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান দ্বার চট্টগ্রাম বন্দরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির ব্যাঘাত ঘটলে বা সঠিক সময়ে পরিবহন না হলে দেশব্যাপী এর প্রভাব পড়বে। এমন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উঠে এসেছে কয়েক শ্রমিক নেতার আলাপেও। সেই আলাপে ৪ প্রাইম মুভার শ্রমিক নেতার নাম এসেছে। তারাই মূলত বন্দরকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান দ্বার দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখতে প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করলে দাবিগুলো যৌক্তিক উল্লেখ করে মেয়র দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধানে জরুরি বৈঠকের আয়োজনের আশ^াস দেন। সেই আশ^াসের প্রেক্ষিতে ২ মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
মেয়র বলেন, বন্দর আমাদের মূল অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। যে কোনোভাবে বন্দর রক্ষা করতেই হবে। গাড়ি বন্ধ হলে দেশের বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এটা বিভক্তির সময় নয়। দেশের অর্থনীতি রক্ষার স্বার্থে সবাইকে ছাড় দিতে হবে। দেশ থেকে ২৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে, অথচ এখন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। আমি আমার সিটি করপোরেশনের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-খাল পরিষ্কার করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম, কিন্তু মাত্র ৫ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পাইনি। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা উপলব্ধি করে ছোট-খাটো বিষয়ে আন্দোলন পরিহার করতে হবে। আমি পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের দাবিগুলো শুনেছি। যেসব দাবি যৌক্তিক সেগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করব।
সংগঠনের নেতারা জানান, গণপরিবহন আইনের বিভিন্ন জটিলতার কারণে মামলা-জরিমানার বোঝা টানতে গিয়ে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আমরা ২ দিনের জন্য গাড়ি বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তবে, মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের দাবিগুলো শুনেছেন। মেয়র মহোদয় আমাদের সহযোগিতা করার বিষয়ে আশ^স্ত করেছেন; তাই দুই মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিত।
আরও পড়ুন:
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম
বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একরামুল করিম, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।