খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সরবরাহ চেইন দুর্বলতায়
সরবরাহ চেইনের দুর্বলতার কারণে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ তথ্য উঠে এসেছে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। গতকাল রবিবার দেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। জানুয়ারি ২০২৫-এ তা কিছুটা কমে ৯.৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে। ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি জুন ২০২৪-এ ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে বেড়ে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ হয়েছে।
তবে বাংলাদেশের প্রধান আমদানির উৎস চীন ও ভারতে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের কম এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম। মূলত, সরবরাহ চেইনের দুর্বলতাই দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির মূল কারণ।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সহায়ক রাজস্বনীতি গ্রহণ করা হয়েছে; নীতি সুদের হার ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে; অতিরিক্ত টাকা ছাপানো বন্ধ রাখা হয়েছে; অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলসহ সরকারি ব্যয় হ্রাসের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক অব্যাহতি/হ্রাস করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জেলা শহরগুলোতে ওএমএসের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে সবজি বিক্রি করা হয়েছে। এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
রমজান উপলক্ষে বিভাগীয় শহরগুলোতে ট্রাকের মাধ্যমে তেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা সুলভ মূল্যে সরবরাহ করা হবে। বাজার মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিটি জেলায় ১০ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তবে এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে, সরবরাহব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটির ফলে তা ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমনÑ পণ্য সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে দমন। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। হিমাগারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গুদাম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও পরামর্শ সেবা নিশ্চিত করা।