বিদেশি বিনিয়োগ টানতে নজর অন্তর্বর্তী সরকারের
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) খরা কাটাতে চায় সরকার। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে না। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ইমেজ কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশি
বিনিয়োগ টানতে বড় সামিট করতে যাচ্ছে। সেখানে বিশ^খ্যাত উদ্যোক্তাদের অংশ নেওয়ার কথা। এ ধরনের সম্মেলন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে উদ্যোক্তারা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, সেটা তারাই সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য সুযোগ-সুবিধা ও বিনিয়োগকৃত অর্থের রিটার্ন নিশ্চিত করতে পারলে উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ বাড়ানো সম্ভব। সম্মেলনে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা তুলে ধরতে হবে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকর্ষণ করতে এপ্রিলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট করা হবে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বিশ্ববিখ্যাত উদ্যোক্তা ও ধনকুবের ইলন মাস্ক, জ্যাক মার মতো সফল বৈশ্বিক উদ্যোক্তাকে ঢাকায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ কিংবা সম উচ্চতার অন্য কোনো উদ্যোক্তাকেও আনা হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল এ সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়েবপেজ খুলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। এ সম্মেলনে বিশ্ব থেকে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ডেকে এনে বিনিয়োগের পরিবেশ তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে ইকোনমিক জোন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও বিনিয়োগের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ সামগ্রিক পরিবেশ দেখানো হবে।
এই সম্মেলনে অংশ নিতে সারাবিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরব, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকার, জেট্রোর মতো সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এসব দেশ, কোম্পানি ও সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে বিডার মাধ্যমে বিশ্বে অন্যান্য ইনভেস্টর হিসেবে ব্যাংক ও করপোরেশনগুলোকেও যুক্ত করা হবে এই সম্মেলনে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মীরসরাইয়ে স্থাপিত ন্যাশনাল ইকোনমিক জোন, জাপান ইকোনমিক জোন এবং বাংলাদেশের সফল ব্যবসায়ীদের শিল্প কারখানাও পরিদর্শন করানো হবে।
জানা গেছে, বছরের পর বছর বিভিন্ন সমস্যার কারণে আগে থেকেই বিনিয়োগে গতি কম। জিডিপির শতকরা হিসাবে বেসরকারি বিনিয়োগ তিন বছর ধরে কমছে। এমন দুরবস্থার পেছনে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কাঠামোগত প্রচারণার অভাব রয়েছে বলে মনে করে বিডা।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ মোট ১৯টি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ জন্য সংস্থাটি একটি হিটম্যাপ তথা গতিশীল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। খাতগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, বস্ত্র (অ্যাডভান্সড টেক্সটাইল ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল), নবায়নযোগ্য জ্বালানি, চামড়া, অটোমোবাইল ও সরঞ্জাম, ওষুধ, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, জুতা, ইলেকট্রনিকস, সেমিকন্ডাক্টর, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, খেলনা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, তথ্যপ্রযুক্তি ও এপিআই।