আলিসের বীরত্বে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে ফাইনালে চিটাগং

স্পোর্টস ডেস্ক
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:৩৮
শেয়ার :
আলিসের বীরত্বে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে ফাইনালে চিটাগং

বিপিএলের ফাইনালে উঠতে হলে চিটাগং কিংসকে তুলতে হবে ১৬৪ রান। খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে ভালো শুরু করেও মাঝের ব্যর্থতায় এক পর্যায়ে ১৩০ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। ১৭ ওভার শেষ তখন। অর্থাৎ, শেষ ৩ ওভারে দরকার ৩৪ রান, উইকেটে আরাফাত সানি, আলিস আল ইসলামের মতো টেল এন্ডাররা। 

সেখান থেকে জেসন হোল্ডারের করা ১৮তম ওভারে আলিসের চার-ছক্কায় এল ১৩ রান। হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারে ৬ রানের বেশি নিতে পারেননি আলিস-সানি। অর্থাৎ, শেষ ওভারে দরকার হয় ১৫ রান। মুশফিক হাসানের করা এই ওভারে দেখা যায় চরম নাটকীয়তা। প্রথম ৩ বলে ৭ রান এলেও ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দারুণ ব্যাট করা আলিসকে। উইকেটে আসেন শরিফুল ইসলাম। ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে না পারলেও চতুর্থ বলে চার পেয়ে যান তিনি। পঞ্চম বলেই আবার আউট তিনি। অর্থাৎ, জিততে শেষ বলে দরকার একটি চার। ব্যথা ভুলে আবারও মাঠে নেমে যান আলিস। কভার অঞ্চল দিয়ে দুর্দান্ত এক শটে বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠান তিনি, মেহেদী হাসান মিরাজদের হতাশ করে ফাইনালে পৌঁছে যায় খুলনা। 

চিটাগং জয় পায় ২ উইকেটে। ৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন আলিস। আরেক পাশে ১৩ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সানি। ব্যাটিংয়ে বীরত্ব দেখানোর আগে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন আলিস। ম্যান অব দ্য ম্যাচ অবধারিতভাবেই তিনি হয়েছেন। 

১৬৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩২ রানে প্রথম দুই উইকেট হারালেও রান তোলার গতি খারাপ ছিল না চিটাগংয়ের। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আসে ৪৬ রান। তৃতীয় উইকেটে দুর্দান্ত জুটি গড়েন হুসাইন তালাত ও ওপেনার খাজা নাফাই। ৪৮ বলে যোগ করেন ৭০ রান। এই দুজনের ব্যাটে যখন সহজ জয়ের পথে ছিল চিটাগং, তখনই খেই হারিয়ে ফেলে নাসুম আহমেদ-মুশফিক হাসানদের বলে। 

দলীয় ১০৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো চিটাগং ১১৭ রান তুলতেই হারায় ৬ উইকেট। একে একে ফিরে যান তালাত (২৫ বলে ৪০), শামীম হোসেন পাটোয়ারি, নাফি (৪৬ বলে ৫৭) ও খালেদ আহমেদরা। অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুনও দলের হয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। দলের বিপদে বাড়িয়ে ১৭তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৩০ রানের মাথায় ফেরেন মিথুন। এরপরই সেই দাপট দেখান আলিস ও আরাফাত।  

এর আগে, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের দায়িত্বশীল ৪১ রান ও শিমরন হেটমায়ারের ঝোড়ো গতিতে তোলা ৬৩ রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারানো খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬৩ রান। প্রথম কোয়ালিফায়ারে বরিশালের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে আফসোস করতে হয়েছে চিটাগংকে। এই ম্যাচে টসে জিতে তাই ফিল্ডিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি চিটাগং অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুন। সিদ্ধান্তের যথার্থতা শুরু থেকেই প্রমাণ করতে থাকেন তার দলের বোলাররা। প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে খুলনার ২ উইকেট তুলে নেয় চিটাগং। 

প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৪৬ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। টুর্নামেন্টে এখনা পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ নাঈম শেখ ২২ বলে ১৯ রান তুলতে পারলেও মেহেদী হাসান মিরাজ, অ্যালেক্স রস কিংবা আফিফ হোসাইনরা ফেরেন এক অঙ্কেই। দল যখন এক শ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায়, তখন পঞ্চম উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অঙ্কন ও হেটমায়ারা। শুরুতে ধীরগতিতে শুরু করলেও ক্রমেই রানের গতি বাড়াতে থাকেন এই দুজন। 

প্রথম ১০ ওভারে ৪৬ রান করা খুলনা শেষ ১০ ওভারে তোলে ১১৭ রান। ১৬ ওভার শেষে খুলনা রান ছিল ৯২। অর্থাৎ, শেষ ৪ ওভারে খুলনা করে ৭১ রান। খালেদ আহমেদের করা ১৭তম ওভারে অঙ্কন-হেটমায়ার মিলে তোলেন ২৩ রান। ১৯তম ওভারে আরও বিধ্বংসী রূপ দেখান হেটমায়ার। আগের তিন ওভারে মাত্র ৬ রান দেওয়া বিনুরা ফার্নান্দোর এই ওভার থেকেই দুইটি চার ও দুই ছক্কায় হেটমায়ার তুলে নেন রান। শরিফুলের করা শেষ ওভারে আসে ১৭ রান। তাতে ১৬৩ রানের লড়াকু পুঁজি পায় খুলনা। 

৩২ বলে ১টি চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ রান করেন অঙ্কন। ৩৩ বল খেলা হেটমায়ার ৬৩ রান করার পথে ৬টি চারের পাশাপাশি ছক্কা হাঁকান ৪টি। ৫ বলে ১২ রানের ক্যামিও খেলেন জেসন হোল্ডার।