রমজানে লোডশেডিং সহনীয় রাখার পরামর্শ

বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠক

লুৎফর রহমান কাকন
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রমজানে লোডশেডিং সহনীয় রাখার পরামর্শ

মজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নানামুখী উদ্যোগের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সাশ্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ এবারের গ্রীষ্ম এবং রমজান লোডশেডিংমুক্ত থাকছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এ সময় লোডশেডিং সহনীয় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নানা বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে

অবহিত করতে বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে সচিব এ বৈঠক করেন। অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্ভর করবে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার ওপর।

সূত্র মতে, গত মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ বিভাগের ওই বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনাররা ছাড়াও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গ্রীষ্মকালীন চাহিদা, রমজান মাসে সরবরাহ, বিশেষ করে সেহরী ও ইফতারির সময় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, সেচকালীন সরবরাহ, সারাদেশে কৃষি সেচ পাম্পে সরবরাহ ঠিক রাখতে বলা হয়েছে বৈঠকে। এ বিষয়ে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়- সরকারি দপ্তরে সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নিয়মিত বৈঠকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, অন্তত যাতে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।

অপচয়রোধে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, পেট্রল পাম্প ও সিএনজি গ্যাস স্টেশন, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, মডেল মসজিদসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে দিনের বেলায় সূর্যের আলোর ব্যবহার বাড়াতে বলা হয়েছে। এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা তার উপরে রেখে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উদ্বুদ্ধ করতে লিফলেট বিতরণের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।

রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে একাধিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্ম ও রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে তারাও উদ্বেগের মধ্যে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে সরবরাহ পরিকল্পনা তৈরি করে। এখন চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ না পেলে লোডশেডিং না দিয়ে উপায় নেই।

গ্রীষ্মকালে এবং রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও কার্যকর তেমন কিছু হবে বলে মনে করেন না এ কর্মকর্তারা। কেউ কেউ বলছেন, প্রতি বছরই গরম বাড়ছে। এ সময় মানুষ বিদ্যুৎ না পেলে বিভিন্ন বিদ্যুৎ স্থাপনা ও অফিসে হামলা করে থাকে। আমরা আশা করছি, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগ নেবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে। তবে সূত্র জানায়, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে এ বছর হিমশিম খেতে হবে। কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ¦ালানি আমদানি করার পর্যাপ্ত অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে অর্থ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করবে জ¦ালানির জোগান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিদ্যুতের বকেয়া বিল না পাওয়ার কারণে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তরা প্রাথমিক জ্বালানি কিনতে পারছেন না। সরকারের কাছে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গ্যাসের সংকটও তীব্র হচ্ছে। অর্থসংকটে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে দেশীয় উৎস থেকেও গ্যাসের জোগান কমছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে উচ্চ দামের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে হতে পারে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আমাদের সময়কে বলেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্ভর করবে সরকারের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার ওপর। পিডিবি গড়ে ১২ টাকার বেশি দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে সেটা গড়ে সাড়ে ৮ টাকায় বিক্রি করে গ্রাহকের কাছে। এই বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা পিডিবির জন্য কঠিন। ফলে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা পাওয়ার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে গ্রীষ্মকালে জ¦ালানি আমদানি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ।

তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা, প্রয়োজনীয় জ¦ালানি তেল এবং চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানির চেষ্টা করছি আমরা। তবে সেটা অর্থ প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করবে।