মজুদ কমছে খাদ্যশস্যের
দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ধীরগতি এবং আমদানি কমায় খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে চালের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলবে।
জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের সময় যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ ছিল, সেখান থেকে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ৭ আগস্ট দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। গতকাল পর্যন্ত সেই মজুদ কমে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৬ টনে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে ৬ মাসে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৯১ টন।
অভ্যন্তরীণ উৎস ও আমদানির মাধ্যমে চাল ও গম সংগ্রহ করে থাকে সরকার। রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে মজুদ কমে আসার পেছনে প্রধানত সরকারিভাবে সময়মতো আমদানি করতে না পারাই দায়ী বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, গত কয়েক মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে বলে বিগত সরকারের সময়ে বারবার দাবি করা হয়েছে। এর পরও দফায় দফায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সে হিসাবে এবারও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও আগে থেকেই সরকারিভাবে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া বাজারে সরকারের কার্যকর মনিটারিং ও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে ভোক্তাদের কষ্ট বাড়ছে।
এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান। মার্চের প্রথমে শুরু হচ্ছে রমজান। খাদ্য মজুদ ও সরকারের নেওয়া উদ্যোগে বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। মানুষ মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে পুড়ছে। যদিও সরকার মনে করছে রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। যদিও গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। রমজানে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য আমদানির ঘাটতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের ২ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। এটা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারে।
এদিকে ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও পানীয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই (সিআইপিএস)। সরবরাহ ও পরিবহনে বিশ্বব্যাপী কিছু সমস্যার কারণে দাম বাড়ার এই আশঙ্কা রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, আসন্ন রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। প্রতি বছর রমজান ঘিরে পণ্যের দাম বাড়ে। এবারও সে আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর অনেক করপোরেট গ্রুপ বাজারে নেই। কিন্তু তাদের শূন্যস্থান পূরণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। ব্যবসায়ীদের সাথেও সংলাপ হচ্ছে না। আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে। সে বিষয়েও দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের হাতে বাজারের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাপ্ত নেই; কাজেই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বার্ষিক উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য সরকারের কাছে থাকলেও দৈনন্দিন চাহিদা ও জোগানোর তথ্য নেই। এ রকম একটা পরিস্থিতি দিয়ে সরকারের পক্ষে কখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাজার তদারকিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বাজার তদারকি দুর্বল হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বাজার তদারকিতে আগের সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, বর্তমান সরকারও একই উদ্যোগ নিচ্ছে। আসলে আমরা নীতির দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়েছি। এটা ভাঙতে হবে, অন্তত নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।