দুই দিন পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি প্রস্তুতি
বায়ান্নের চেতনা চব্বিশের প্রেরণা নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। তবে মেলার দ্বিতীয় দিনও প্রস্তুতি শেষ করতে পারেননি অনেক প্রকাশক ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। চলছে স্টল নির্মাণের কাজ, যা নিয়ে ক্ষোভ জানান অনেক। বিশেষ করে ধুলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বইমেলা নিয়ে তাদের অনেক প্রত্যাশাও দেখা যাচ্ছে।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে বইয়ের বিক্রি শুরু করলেও এখনও অনেক স্টল পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়নি। দ্বিতীয় দিনে বইমেলায় মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। তবে নতুন বইয়ের সুবাস নিতে মেলায় ছুটে এসেছে অনেক বইপ্রেমী। এ ছাড়া মেলায় বিভিন্ন রকমের হকারদের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে খাবারের স্টলগুলো এখনও ঠিকঠাক করে বসেনি। স্টল দ্রুত নির্মাণের জন্য নির্মাণশ্রমিকরা দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন।
মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন। অনেকে পছন্দের বই কিনছেন। উল্লাসের পাশাপাশি বিরক্তিভাবও লক্ষ্য করা গেছে তাদের অনেকের মধ্যে। এমনই একজন হলেন মাঝবয়সী চাকরিজীবী মনসুর আলম। অফিস থেকে ফেরার পথে বইমেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, বইমেলা আমাদের আবেগ ও চেতনার জুড়ে রয়েছে। এটাকে শুধু মেলা বলব না, এটা আমাদের মেধা ও মননের প্রতীক। কেনো মেলা শুরুর পরও এত অব্যবস্থাপনা থাকবে। প্রতি বছর ঠিক একই রূপ। কেন একটু আগে থেকে মেলায় প্রস্তুতিটা শুরু করা যায় না। এটা বাংলা একাডেমির ভাবা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালওয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মায়শা জাহান বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশ একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বইমেলার আয়োজন কেমন হচ্ছে, সেটা দেখতে এসেছি। তবে মেলা প্রাঙ্গণে অনেক অসংগতি। সবচেয়ে বেশি বিরক্তকর ধুলা। এমন জানলে আরও পরে আসতাম। এর মধ্যেও কয়েকটি নতুন বই দেখে গেলাম। মেলার পরিবেশ ঠিক হলে আবার আসা বইগুলো নিতে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আবিষ্কার প্রকাশনীর প্রকাশক দেলোয়ার হাসান বলেন, বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির কাছে এ বছর যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। মেলা নিয়ে বাংলা একাডেমি তাদের সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। নানা রকমের অব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ। আমাদের প্রত্যাশা মেলাকে যত দ্রুত সম্ভব অসংগতি মুক্ত করা।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সম্মান জানিয়ে এবারের মেলায় বেশিরভাগ স্টল সাজানো হয়েছে লাল, কালো ও সাদা রং দিয়ে। প্রকাশকরা বলেছেন, বইমেলায় তাদের স্টলগুলোকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে লাল, শোকের প্রতীক হিসেবে কালো ও আশার প্রদীপ হিসেবে সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণজুড়ে টানানো হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টার। প্রতিটি ব্যানার, পোস্টারে লেখা রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সেøাগান। এর মধ্যে রয়েছে ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ’, ‘যখন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়, ইতিহাস নতুন পথ তৈরি করে’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, হামার বেটাক মারলু ক্যানে?’। গতকাল বইমেলার দ্বিতীয় দিন নতুন বই এসেছে ১৩টি।
মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হেলাল হাফিজের রাজনৈতিক পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৃদুল মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন সুমন রহমান। প্রাবন্ধিক বলেন, ঊনসত্তরের গর্ভ থেকে যেসব কবির জন্ম হয়েছিল, কবি হেলাল হাফিজ তাদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতার উচ্চারণ ছিল রাখঢাকহীন, স্পষ্ট, অনাবিল ও অভাবিত। কবিতা তার কাছে কেবল ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসের বিষয় ছিল না। তিনি মনে করতেন, সমষ্টির জন্যও কবিতার একটা দায় আছে। সত্তর থেকে চুয়াত্তরের মধ্যে যে রাজনৈতিক কবিতাগুলো তিনি লিখেছেন, সেগুলোর মূল সুর কখনও মুক্তিযুদ্ধ, কখনও স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক পরিস্থিতিজাত হতাশা, আশাবাদ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের অবস্থা ও অবস্থান, রাষ্ট্রের কাছে কবির প্রত্যাশা, দ্রোহ এসবই তার কবিতায় প্রত্যক্ষভাবে কখনও পরোক্ষভাবে ওঠে এসেছে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
লেখক বলছি মঞ্চ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রাসেল রায়হান, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন শফিক এবং শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ এবং জাকির আবু জাফর। আবৃত্তি করেন অনন্যা লাবণী এবং শিপন হোসেন মানব। সুমন মজুমদারের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সঙ্গীতমঞ্জুরী শিল্পীগোষ্ঠী’-র পরিবেশনা। একক সংগীত পরিবেশন করেন রিজিয়া পারভীন, প্রিয়াংকা গোপ, ইসরাত জাহান, মিজান মাহমুদ রাজীব, মো. মাইদুল হক এবং নাফিজা ইবনাত কবির।
আজকের আয়োজন: আজ সোমবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হায়দার আকবর খান রনো’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন ও জলি তালুকদার। সভাপতিত্ব করবেন দীপা দত্ত।