যে মন্ত্রে সফল নাঈম
ব্যাট হাতে সময়টা দারুণ কাটাচ্ছেন নাঈম শেখ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জাতীয় ক্রিকেট লিগে ঢাকা মেট্রোর হয়ে খেলেছিলেন এ বাঁহাতি। সেখানে সর্বাধিক রান (১০ ইনিংসে ৩১৬) করেছিলেন। সেই ছন্দটা ধরে রেখেছেন চলমান বিপিএলের ১১তম আসরেও। খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন নাঈম।
গতকাল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচে অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস খেলেছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ ওপেনার। তার ৬২ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৮টি ছক্কা। ম্যাচসেরা নাঈমের এটি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস এবং সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। রংপুর ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করার পর তিনি এখন চলতি বিপিএলে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যানও (১১ ইনিংসে ৪৪৪)। তিনি টপকে গেছেন তানজীদ তামিমকে (১১ ইনিংসে ৪২৭)।
রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচশেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাফল্যের রেসিপি জানিয়েছেন নাঈম শেখ। খুলনার ওপেনার বলেন, ‘সর্বশেষ যতগুলো টুর্নামেন্ট খেলেছি, নিজের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করেছি। মাঠে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। অফ সিজনে কাজ করেছি। আগে অফ স্পিনে অনেক সংগ্রাম করছিলাম। ওই জায়গা থেকে বের হয়ে আসছি কীভাবে ডট না করে স্ট্রাইক রোটেট করা যায়। আর রেঞ্জ হিটিং। তিন বছর আগে মুশফিক ভাই বলেছিল, রিভার্স সুইপ নিয়ে কাজ করা গেলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। এখন অফ স্পিনে সুইপ-রিভার্স সুইপ অনেক সহজ হয়েছে। স্লগ সুইপে আগে ভালো ছিলাম, মাঝখানে সংগ্রাম করছিলাম। অবশ্যই কিছু জিনিস পরিবর্তন এনেছি, তাই সাফল্য আসছে।’
নাঈম জাতীয় দলের হয়ে একটি টেস্ট, আটটি ওয়ানডে ও ৩৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০২৩ সালে সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেন তিনি। জাতীয় দলের বাইরে থাকার এই সময়টায় মাইন্ড ট্রেনিং নিয়ে কাজ করেছেন নাঈম। এ ছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচিউরিটিও বেড়েছে তার।
শৃঙ্খল জীবনযাপনও তাকে সফল হতে সহায়তা করেছে জানিয়ে নাঈম বলেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটের সব কোচের কথা বলতে হবে। বাবুল স্যার, সোহেল স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। আনোয়ার ভাই নামে একজন আছেন। নির্দিষ্ট একজন বলতে গেলে মাইন্ড ট্রেনিং নিয়ে কাজ করেছি, ওটা অনেক ভূমিকা রাখছে। শৃঙ্খলাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমার পরিবার...।’
বিপিএল শুরুর আগে নিজের ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য ছিল না জানিয়ে নাঈম বলেন, ‘সত্যি বলতে কোনো প্রত্যাশা ছিল না। বেসিক ঠিক রেখে প্রসেস মেনে চলতে চাই। কোনো প্রত্যাশা রেখে শুরু (বিপিএল) করিনি। কোনো লক্ষ্য নেই, উন্নতি করতে পারছি কি না নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ। উন্নতি করতে চেয়েছি, হয়েছে কিনা। এনসিএলেও কোনো লক্ষ্য ছিল না, যেমন সর্বোচ্চ রানের মালিক হতে হবে বা ভালো করতে হবে। এমন কোনো ভাবনা ছিল না। নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ যত বেশি বড় করা যায়।’
বিপিএলে এবার প্রচুর রান হচ্ছে। সেঞ্চুরি ছাড়াও চার-ছক্কা এবং দলীয় সংগ্রহও দুশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও সীমানা বাউন্ডারি ছোট এবার; তবুও বিপিএলে ব্যাটসম্যানদের রান পাওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন নাঈম, ‘ভালো উইকেট হলে সবসময় ভালো। দেশিদের নিয়ে প্রশ্ন উঠত আগে, বাউন্ডারি মারতে পারি না, চার-ছয় মারতে পারি না। ভালো ট্র্যাক দিন, অবশ্যই ভালো খেলব। এ রকম উইকেট দিলে ব্যাটসম্যানরা সবসময় রান করবে। বাইরের দেশে সবসময় দেখি মারছে। সবাই ভাবে আমাদের দেশের প্লেয়াররা পারে না। আসলে এমন না। উইকেট ভালো হলে বাংলাদেশিরাও রেঞ্জ হিটিংয়ে খুবই ভালো।’