৭ কলেজ পরিচালনার নতুন কাঠামো নিয়ে অনিশ্চয়তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে থাকছে না রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। চলতি বছর থেকেই ঢাবির অধীনে ভর্তি না নেওয়াসহ গতকাল সোমবার পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সাত কলেজের পরবর্তী কাঠামো, ভর্তিসহ শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র বিশ^বিদ্যালয় চায়। তারা আর জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে ফিরে যেতে চায় না। এদিকে ঢাবি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মূল দাবি বাস্তবায়নের পর আরও ৫ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি।
গতকাল সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের বিষয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ধৈর্য্য ধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না থাকা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাবির অধীনে ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনায় সুপারিশ। এ ছাড়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি করা আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সাত কলেজের যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ৬ দাবিতে ৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না করা হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাবি প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে। ঢাবি উপ-উপাচার্যকে (শিক্ষা) পদত্যাগ করতে হবে; ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা-পুলিশের হামলার ঘটনায় এসি-ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্তসাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা; ঢাবির সঙ্গে সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মইনুল হোসেন বলেন, রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণে ইতিবাচক সাড়া না পেলে নিউমার্কেট থানা ঘেরাও এবং সাত পয়েন্টে ঢাবির বাস চলতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) আমরা ছয় দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম, সেখানে একটি দাবি ছিল অধিভুক্তি বাতিল করা; শুধু এই দাবিটি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখনও পাঁচ দফা দাবি বাকি।
এর আগে বিকালে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস নিজের কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ছয় দাবির সবগুলো নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি উপ-উপাচার্যের আচরণের বিষয়টিকে অনাকাক্সিক্ষত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কতগুলো পরীক্ষা চলমান। এগুলো শেষ করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা করতে সম্মত। শিক্ষার্থীরা সম্মত থাকলে যেসব পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলো নতুন করে দিতে বলেছি।
এর আগে গত রবিবার পাঁচ দফা দাবিতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে তার অফিসে বাগবিতণ্ডার জেরে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে উপ-উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হয় তারা। পরে সেখানেই সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ঢাবি শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিতে গেলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। চলে সাড়ে রাত তিনটা পর্যন্ত। এসময় দুপক্ষকে নিবৃত্ত করতে পুলিশ কয়েক দফা সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মোতায়েন করা হয় ৪ প্লাটুন বিজিবি। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান পেতে পারি। এক্ষেত্রে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা অধৈর্য হলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। ধৈর্যের সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মোট শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে ৫৫৫টি সরকারি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট কলেজের মধ্যে ৮৮১টিতে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
সাদা দলের উদ্বেগ: শিক্ষার্থীদের সংঘাতকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাবির বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। গতকাল দুপুরে ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়কদ্বয় অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারের নেতৃত্বে সাদা দলের আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি যে কোনো সংকটে সাদা দল ঢাবি প্রশাসনের পাশে থাকার আশ্বাস দেয়।