মাদ্রাসা শিক্ষকদের পুলিশের লাঠিচার্জ আহত ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
মাদ্রাসা শিক্ষকদের পুলিশের লাঠিচার্জ আহত ১০

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে এবতেদায়ি শিক্ষকদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। এতে নারী শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকালে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষক প্রতিনিধিরা। এদিকে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া দপদপিয়া শেখবাগল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন তারা। রবিবার দুপুর ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসামাত্র পুলিশ তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠি নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে নারী মাদ্রাসা শিক্ষকসহ প্রায় ১০ জন আহত হন। এদের মধ্যে ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেনÑ আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), বিন্দু ঘোষ (২৯) ও মারুফা আক্তার (২৫)। ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, জরুরি বিভাগে আহত শিক্ষকদের চিকিৎসা চলছে। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের এডিসি মীর আসাদুজ্জামান বলেছেন, মিছিল নিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। শিক্ষকরা লাঠিচার্জের যে অভিযোগ করছেন তা ভিত্তিহীন। ছত্রভঙ্গ করার জন্য জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, স্মারকলিপি দিতে মাদ্রাসা শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে জাদুঘরের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

শিক্ষক প্রতিনিধি কাজী মোখলেছুর রহমান জানান, আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচার ও দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে এপিএস রাস্তায় এসে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। সচিব বিষয়টি দেখবেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ^াস দিয়েছেন। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষক প্রতিনিধিরা। তবে যতক্ষণ হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি চলবে। 

পুলিশ মিছিলের অনুমতি দিয়েও হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে শিক্ষক প্রতিনিধিরা বলেন, ৪০ বছর অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন মাদ্রাসার শিক্ষকরা বিনা বেতনে শিক্ষকতা পেশায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো জাতীয়করণের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির নিন্দা : শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি জানায়, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, যা চরম অবহেলার বহির্প্রকাশ। সর্বশেষ রবিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে শাহবাগে শিক্ষকদের আন্দোলনে হামলা করেছেÑ এটা ২০২৪-এর অভ্যুত্থান পরিপন্থি। নাগরিক কমিটি মনে করে, দাবি আদায়ে আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।

ঢাবিতে মশাল মিছিল 

আন্দোলনরত এবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনায় মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শাহবাগে মিছিল নিয়ে যায় সংগঠনটি। এ সময় তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মিছিলে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দেখা যায়।