মার্কিন সহায়তা বন্ধের প্রভাব পড়বে বিভিন্ন প্রকল্পে
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বের বৃহত্তম দাতা দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। কোনো দেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তা ৯০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটি। তবে জরুরি খাদ্যসহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক অর্থায়নকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। গত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহায়তা দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে ৫০ কোটি ডলার, ২০২২ সালে ৪৭ কোটি ডলার, ২০২৩ সালে ৪৯ কোটি ডলার ও ২০২৪ সালে ৪৫ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনার ফলে বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে। স্বাস্থ্য খাতের পিইপিএফএআর (এইচআইভি/এইডস) কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটেও বাংলাদেশকে বড় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা এখন অনিশ্চিত। এ ছাড়া বাংলাদেশে সামরিক সহায়তাও বন্ধ হতে পারে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক সহায়তাকে সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, চীন ও অন্যান্য দেশের তরফে সাহায্যের দিকে মনোযোগ পেতে পারে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্দেশনার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়নি। যদিও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাশিতই বলছেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার
প্রেস উইং মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) তাদের চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিতের নির্দেশ দিলেও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা কার্যক্রম এ স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা কার্যক্রম চলবে। আর এ স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের জন্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন সহায়তা বন্ধের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি এটার উত্তর এখন দিতে পারব না। কারণ, আমার কাছে এ রকম উত্তর আসেনি। তবে এটা ইতোমধ্যে পত্রিকায় চলে এসেছে। এটা মোটামুটি প্রত্যাশিতই ছিল। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ৯০ দিনের জন্য সব ধরনের তহবিল বন্ধ রাখছে। উনি (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকে বলছিলেন, এগুলো নতুন করে বিবেচনা করবেন। তারা বিবেচনার জন্য সময়টা নিয়েছে, এভাবে তো বলেছে। ধরে নেওয়া যায়, এ ধরনের তহবিল কমবে। এটাই আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
মার্কিন সহায়তা বন্ধে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাৎসরিক অর্থায়নে প্রভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটা নতুন বাস্তবতায় আছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট এসেছেন। তার নীতিমালা যে আগেরগুলোর চেয়ে ভিন্ন, এটা সবাই জানতেন। আমাদের দেখতে হবে, আসলে শেষ অবধি কী দাঁড়ায় এবং কোনো পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হবে তখন সেটা আমাদের ম্যাটারস বিহাইন্ডে বের করতে হবে- কীভাবে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। মা?র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা-ইউএসএইডের অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সহায়তা বন্ধে কী প্রভাব পড়তে পারে- এ প্রশ্নের উত্তরে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে ৯০ দিনের জন্য সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে দেখবে, কোন সাহায্যগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে যায়। সেগুলো তারা রাখবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চিন্তা-ভাবনাও বড় নিয়ামকের ভূমিকায় থাকবে। তিনি বলেন, তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের যেসব সংস্থা তহবিল পায়, তাদের সে তহবিল বন্ধ হতে পারে। এ ছাড়া মার্কিন সহায়তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে সহায়তা পায়, সেগুলোও অনিশ্চিত হতে পারে।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ইউএসএআইডির মূল সাহায্য আসে রোহিঙ্গা নিয়ে। সাত বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে। সরকার আশা করছে, এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এটি (স্থগিত) ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। আর বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নির্দেশ দিয়েছেন, যতটুকু সম্ভব আইনের মধ্যে থেকে বিদেশি সহায়তার জন্য নতুন তহবিল দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্তে মানবিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এই স্থগিতাদেশ বৈশ্বিক অস্থিরতা ও জীবনহানি বাড়াতে পারে। অক্সফাম আমেরিকার প্রধান অ্যাবি ম্যাক্সম্যান মন্তব্য করেছেন, এতে সংকটে থাকা কমিউনিটির জীবন বিপর্যয়কর হবে। এই স্থগিতাদেশ কমপক্ষে তিন মাস স্থায়ী হবে। প্রথম ৮৫ দিনের মধ্যে রুবিও বিদেশি সহায়তার কর্মসূচি চালু রাখার, পরিবর্তন বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ছাড়া ২০০৩ সালে শুরু হওয়া প্রেসিডেন্টের জরুরি এইডস রিলিফ পরিকল্পনা তহবিলও স্থগিত হতে পারে। এরই মধ্যে এটি আড়াই কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬ হাজার কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা খরচ করেছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রের মোট সরকারি ব্যয়ের মাত্র ১ শতাংশ।