আইআইজি-আইটিসিদের বাদ রেখেই খসড়া তৈরি
গ্রাহকসেবায় বিটিআরসির নতুন বিধিমালা
গ্রাহক চাহিদা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের পক্ষ থেকে গুণগত সেবা পাওয়া নিশ্চিতে নতুন বিধিমালা আসছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘বিটিআরসি (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) রেগুলেশন, ২০২৪’ শিরোনামে বিধিমালাটি আনতে যাচ্ছে। বিধিমালার খসড়ায় টেলিকম সেবার বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক (কল ও ডেটা) তথা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট তথা আইএসপি এবং এনটিটিএন অপারেটরদের সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে রাখা হয়নি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) ও সাবমেরিন ক্যাবলসকে (বিএসসি)। যদিও সেবাপ্রদানকারী অপারেটরদের দাবি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতে এই তিন অপারেটরের ভূমিকা রয়েছে। তারা বলছেÑ পুরো ভ্যালুচেইনকে বিধিমালার আওতায় না আনলে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ সেবায় এক অপারেটর আরেক অপারেটরের ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি অপারেটরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই বিধিমালার প্রয়োজন আছে। আইএসপিদের ওপর যেসব শর্ত রাখা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তার থেকে উন্নত সেবা গ্রাহকদের দেওয়া হয়। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে হলে আইআইজি থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে হবে। এ জন্য ইন্টারনেট সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে এই বিধির আওতায় আনতে হবে। খসড়া বিধিমালায় আইআইজি বা আইটিসিদের রাখা হয়নি। বিষয়টি বিটিআরসিকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে এনটিটিএন অপারেটর ফাইবার এ্যাট হোমের সিএসও শারফুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, বিধিমালায় যে ধরনের সেবার কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে ভালো মানের সেবা আমরা নিশ্চিত করে আসছি। তবে বাকি অপারেটরগুলোকে বাদ দিয়ে সার্বিকভাবে গুণগত মানের সেবা নিশ্চিত করা আসলে সম্ভব নয়।
বিধিমালার খসড়া বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবায় ‘ভয়েস’-এর ক্ষেত্রে এমএনওগুলোকে কল ড্রপের হার সর্বোচ্চ ১ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। এই হার নিশ্চিত করতে হবে প্রতি বিটিএস (বেস ট্রান্সিভার স্টেশন) তথা নেটওয়ার্ক টাওয়ারের নিজ নিজ কাভারেজভুক্ত এলাকায়। বিটিএস তথা নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল বা বন্ধ থাকতে পারবে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। খুদেবার্তা বা এসএমএস সফলভাবে প্রেরণ ও গ্রহণের হার হবে সর্বনিম্ন ৯৯ শতাংশ। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পরীক্ষাকালে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ডাউনলোডে কমপক্ষে ১৫ এমবিপিএস এবং আপলোডে ৪ এমবিপিএস হতে হবে। ল্যান্ড লাইনের সফল কলরেট এবং কলড্রপের হার মোবাইলকলের মতোই। তবে সফল কল সেটআপ হতে হবে সর্বোচ্চ ৬ সেকেন্ডের মধ্যে।
ব্রডব্যান্ডের প্যাকেজের গতির শতভাগ স্পিড
আরও পড়ুন:
হরতাল-অবরোধে শীতের পোশাক ব্যবসায় মন্দা
ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ‘পিং রাউন্ড ট্রিপ’ (ওয়েবসাইটে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রবেশের চেষ্টা এবং রেসপন্স আসার মধ্যবর্তী সময়) সর্বোচ্চ ২৫ মিলি সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আবার গ্রাহক ইন্টারনেটের যে গতির প্যাকেজ কিনবেন, সেই গতির শতভাগ হারে ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড দিতে হবে। প্যাকেট লস হতে পারবে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। সঞ্চালন ব্যবস্থায় কোনো গোলযোগ বা সমস্যা হলে সেটির সমাধানে সর্বনিম্ন ৪ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় পাবে আইএসপিগুলো।
এনটিটিএনদের ল্যাটেন্সি সর্বোচ্চ ৫ মিলি. সে.
এই বিধিমালার আওতায় রাখা হয়েছে এনটিটিএন অপারেটরদেরও। এনটিটিএনদের ল্যাটেন্সি সর্বোচ্চ ৫ মিলি সেকেন্ড পর্যন্ত রেখে সুপারিশ করা হয়েছে খসড়ায়। ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ডেটা পৌঁছাতে যে সময় প্রয়োজন, সেটিই ল্যাটেন্সি। পাশাপাশি এনটিটিএনগুলোকে সর্বনিম্ন ৯৭ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ পর্যন্ত আপটাইম নিশ্চিত করতে হবে। সঞ্চালন ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হলে সেটির সমাধানে প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা সময় পাবে এনটিটিএন অপারেটরগুলো।
অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে ৫ কর্মদিবসে
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
নেটওয়ার্ক ব্যতীত অন্যান্য সব বিষয়ে গ্রাহক অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে শতভাগ নিষ্পত্তি করতে হবে। গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে ৯০ শতাংশ গ্রাহকদের কল ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিতে হবে। সর্বোচ্চ ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে শতভাগ গ্রাহকের কল রিসিভ করতে হবে সেবাকেন্দ্রগুলোকে। ৯০ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ সর্বোচ্চ ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নিতে হবে।
সেবার মান কমলে থাকছে শাস্তি
গুণগত সেবা নিশ্চিতে বিধিমালায় উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ রেকর্ড রাখা এবং তা নিয়মিতভাবে বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। গুণগত মানের স্ট্যান্ডার্ড মানতে ব্যর্থ হলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইন-২০০১ এর ধারা ৬৫ অনুযায়ী প্রশাসনিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়াতে।
এই খসড়া বিধিমালা সম্পর্কে বর্তমানে জনমত নিচ্ছে বিটিআরসি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্দিষ্ট ই-মেইলে এই মতামত জানানো যাবে।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল