জামিনে কারামুক্ত ১৬৭ বন্দি
রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৬৭ জন বিডিআর সদস্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে কাশিমপুর থেকে ১২৬ জন এবং ঢাকা থেকে ৪১ জন মুক্তি পান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় মুক্তিপ্রাপ্তদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পরিবারের সদস্যরা।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১-এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুনাল ২-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া গত রবিবার বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর গত মঙ্গলবার জামিনপ্রাপ্ত ১৭৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ১২৬ জনের মুক্তির আদেশ কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ১২৬ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৪ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২
থেকে ৮৯ জন এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আকতার পারভেজ সর্বোচ্চ ভোটে সিএসই পরিচালক
এদিকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর গতকাল দুপুর ১টার দিকে জামিন পাওয়া ৪১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আবু ইউসুফ। এদিন সকাল থেকেই কারাগারের মূল গেটের সামনে পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করেন। তাদের একজন মালিহা আক্তার। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় তিন মাস বয়স ছিল মালিহার। এখন তিনি ১৬ বছরের তরুণী। ঠাকুরগাঁও থেকে বাবাকে নিতে এসেছেন। বাবার জন্য ফুলের মালা নিয়ে কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জ্ঞান হওয়ার পর কখনও বাবাকে পাননি তিনি। মালিহা বলেন, ‘আমি কখনও বাবার আদর পাইনি। এত দিন পর আজ বাবা মুক্তি পাবেন। তাই খুশির সীমা নেই।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তর রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রচলিত আইনে বিচার করে।
পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা, আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের আপিলের রায় হয়।
আরও পড়ুন:
বৃহত্তম হিমশৈল
এদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছেন। হত্যা মামলার সঙ্গে এটিরও বিচারকাজ ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি। একপর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।