বেক্সিমকো ফের ৭শ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বেক্সিমকো ফের ৭শ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা চায়

বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের কারখানাগুলো চালু রাখতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে থাকা ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭শ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছে। এ ঋণ পেলে তারা কারখানাগুলো পরিচালনা করে ধীরে ধীরে ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারবে বলে দাবি করছে। এ লক্ষ্যে বছরে ৪শ কোটি টাকা করে বকেয়া ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনাও সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার বা ব্যাংক এ বিষয়ে কিছুই বলছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বেক্সিমকোর লে-অফকৃত সব কারখানার ব্যাংকিং সুবিধাসহ কারখানা খুলে দেওয়া’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবির কথা তুলে ধরেন গ্রুপটির শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের প্রশাসন বিভাগের প্রধান সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ ও বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রশাসন বিভাগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম। গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডির সঙ্গে কথা বলেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান।

লে-অফ প্রত্যাহার করে তিনটি দাবির কথা জানানো হয়। এগুলো হলো- গার্মেন্টস বিভাগের সব কারখানা চালু করা, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি প্রদান করা এবং কারখানা ও ব্যবসা চালু রেখে বকেয়া বেতন ও কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানা এখন বন্ধ। জানুয়ারি পর্যন্ত বেতন-মজুরি পাওয়া গেলেও ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি সব বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবেন। সেই সঙ্গে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের আশপাশের দোকানদার, অটোরিকশাচালক ও স্কুল-মাদ্রাসা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপার্জনের বিষয়টি জড়িত। ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখাই উত্তম

বিকল্প বলে মনে করেন বক্তারা। ব্যক্তির অপরাধে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শাস্তি না দেওয়ার অনুরোধও জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে এক শুনানিতে বেক্সিমকো গ্রুপের দায়ের পরিমাণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। তিনি বলেন, ১৬টি ব্যাংক ও সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকো গ্রুপের ৭৮টি প্রতিষ্ঠানের দায়ের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ হিসাব ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের।

এদিকে বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেড তাদের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলস কারখানাগুলো চালু রাখতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার সুযোগ চেয়েছে। একই সাথে অপারেটিং ব্যয় মেটাতে আরও ৪শ কোটি টাকা ক্যাশ ক্রেডিট (সিসি) বা ঋণ সুবিধা চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরভিত্তিক সব দেনা দুই বছরের মোরাটোরিয়াম সুবিধাসহ ৫ শতাংশ সুদে রি-শিডিউল করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বেক্সিমকো লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরী গত ১৬ জানুয়ারি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কয়েকটি প্রস্তাবনাসহ এসব আবেদন করেন। কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা ও রপ্তানি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত খরচ কমানো ও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের কোম্পানির মুনাফা বাড়ানোর একটি পরিকল্পনা দিয়েছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ বছরের বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের রপ্তানির চিত্র দেখলে বোঝা যায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য। এ সময়ে বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের গড়ে মাসিক রপ্তানির পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৫৯ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে।

অন্যদিকে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সালমান এফ রহমানের অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড ও কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি এলসির (বিক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৪ ইউএস ডলারের পণ্যমূল্য রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ শহরে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরআর গ্লোবাল ট্রেডিং এফজেডই ও সাইফ লাউঞ্জ এসব অর্থ পাচার করে। এ সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং মামলা তদন্তাধীন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এজাহারনামীয় আসামিদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করা হয়। তাদের নামে ঢাকা জেলার দোহারে থাকা প্রায় ২ হাজার শতাংশ জমি এবং ভূমির ওপর নির্মিত স্থাপনা, গুলশান ২-এ দ্য ইনভয় ৮৪ ভবনে সালমানের ছেলের ৬ হাজার ১৮৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ নম্বর রাস্তার ৩১ নম্বর প্লটের ওপর নির্মিত (ট্রিপ্লেটস) ছয়তলা ভবনের ২ ও ৩ তলার ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুটের একটি (ডুপ্লেক্স) ফ্ল্যাট আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। এসব সম্পদের বাজার মূল্য ২৫০ কোটি টাকা।

ট্রেড বেইসড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ৮৩ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।

ভাই, ছেলেসহ সালমান এফ রহমানের দুই হাজার শতক জমি ক্রোকের আদেশ

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই এএসএফ রহমানের প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা মূল্যমানের ১ হাজার ৯৬৭ শতাংশ জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন বলে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী নিশ্চিত করেছেন।