ভারতীয়দের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফের উত্তেজনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ভারতীয়দের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে চৌকা সীমান্তে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা ও কিরণগঞ্জ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির মাঝামাঝি এলাকায় এ উত্তেজনা দেখা যায়।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তে দুপুর থেকে দুই দেশের নাগরিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে 

কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে হয়েছিল পতাকা বৈঠক।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, গতকাল দুপুরে সীমান্তে শূন্যরেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে গম কাটতে গিয়েছিলেন তারা। তখন ভারতীয় নাগরিকরা এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি আমগাছ কেটে দেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হাঁসুয়ার আঘাতে এবং তাদের ছোড়া পাথরে কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হন।

স্থানীয় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. বাদশা গণমাধ্যমকে জানান, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক। তিনি জানান, তিনিসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজনের মধ্যে বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ও মো. ফারুক হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন।

বিকালে এক ব্রিফিংয়ে বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল। ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং তারা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরে বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিজিবি কমান্ডার গণমাধ্যমকে জানান, উচ্ছৃঙ্খল লোকজন নিয়ন্ত্রণে বিএসএসফ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। বিজিবি কমান্ডার বলেন, এ ঘটনার সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে আছেন। কেউ যাতে শূন্যরেখা অতিক্রম না করে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিজিবি সদা প্রস্তুত আছে। বিজিবির পাশে দেশপ্রেমিক জনগণও রয়েছেন।

আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, তাদের কাছে আহতের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজন (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে তারা বিস্তারিত জানিয়েছেন। আশা করছেন, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা হবে।