গ্রিডলাইনে আটকে আছে রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন
গ্রিডলাইন নির্মাণে সময়ক্ষেপণসহ বেশকিছু কারিগরি কারণে পিছিয়ে পড়ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও গ্রিডলাইনের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করা যাচ্ছে না। ২৪শ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের আসার কথা থাকলেও তা চলতি বছরের শেষদিকে কিংবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে আসবে কি না, এ নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালেই প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল।
রূপপুর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন ও সরবরাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো গ্রিড ও সঞ্চালনব্যবস্থার উন্নয়ন। কারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও যদি গ্রিডলাইন নির্মাণ শেষ না হয় তবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না। উপরন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাধারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো নয়। ফলে গ্রিডলাইন, সাবস্টেশন বা উপকেন্দ্রগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বিত হতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট (আরএনপিপি) প্রকল্প স্থাপনের ধারণাটি হাতে নেয় এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণসংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে মস্কোর সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই করে ঢাকা। বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপির জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি আর্থিক চুক্তি সই করে। এ অর্থ হচ্ছে প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ। আর্থিক অঙ্কে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষতাচ্যুত হওয়ার পর এ প্রকল্পে নানারকম দুর্নীতি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাক্যুয়েশনে (উদ্বাসন) সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল একনেক সভায় ১০ হাজার ৯৮১ কোটি ৭৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। পরবর্তীকালে এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যমুনা ও পদ্মা নদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাক্যুয়েশন সংশ্লিষ্ট ৪০০ কেভি ও ২৩০ কেভি রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শীর্ষক একক স্কিমটি ৬ হাজার ৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার। প্রকল্পটির মেয়াদ ১ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ২০২২ সালের ৭ জুলাই অনুমোদন দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তৎকালে জানিয়েছিল, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে। তবে গ্রিড নির্মাণ ধীরগতিতে হওয়ার কারণে ২০২৫ সালে এসেও প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পসংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মূল প্রকল্প নির্মাণকাজ সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে প্রকল্পটি স্বাভাবিক অগ্রগতিতে ভাটা পড়ে গ্রিড লাইন নির্মাণকাজ ধীরগতিতে হওয়ায়। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। এতেও কাজ পিছিয়ে যায়। এ কর্মকর্তা বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিডলাইন প্রকল্পগুলো ভারতীয় ঋণে হওয়ার কথা ছিল। সেগুলো শুরুর দিকে বেশ জটিলতায় পড়ে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ঋণ ছাড় করতে বেশ সময় নেয়। বাংলাদেশ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও দ্রুত ঋণ ছাড় হচ্ছিল না। পরে বাংলাদেশ সরকার গ্রিডলাইন নির্মাণ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ থেকে বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ততদিনে অনেক সময় চলে যায়। তবে এখন গ্রিডলাইন নির্মাণ অনেক এগিয়েছে। তবু দু-একটি লাইন নির্মাণে আরও সময় লাগবে। তিনি যোগ করেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যেসব দেশ থেকে যে কোম্পানির মেশিনারিজ রূপপুরে বসানোর কথা ছিল, সেগুলো কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। ভিন্ন দেশ থেকে মেশিনারিজ আমদানি করে স্থাপন করতে হয়েছে। এর পরও মূল প্রকল্পের নির্মাণকাজ অনেক এগিয়েছে। এখন গ্রিডলাইনের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পিজিসিবি যা বলছে
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ ইভাক্যুয়েশনের জন্য ৩টি সঞ্চালন লাইনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে প্যাকেজ-১ বা লট-১ প্রকল্পে রয়েছে রূপপুর বাঘাবাড়ি ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণকাজ। ২০২২ সালের ২৯ জুন রূপপুর-বাঘাবাড়ি সার্কিন লাইনটি কমিশনিং করা হয়। পিজিসিবি বলছে, এখন এ প্রকল্পে ব্যাক ফিড পাওয়ার সরবরাহের কাজ চলমান আছে। এ ছাড়া প্যাকেজ ৫ এর আওতায় রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে গত বছরের ৩০ এপ্রিল কমিশনিং করা হয়েছে। প্যাকেজ-৩ এর আওতায় রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের রুট পবির্তনের কারণে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার লাইন বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে। ফলে আরও ১৫টি টাওয়ার স্থাপন করতে হবে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইন নির্মাণের সমন্বয় করে ৪০০ কেভি পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের কাজটি চলতি বছরের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি জনবল তাদের নিজের দেশে ফিরে যায়। ফলে পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে আবার শুরু হয়েছে।
পিজিসিবির প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রিডলাইন নির্মাণে কিছু প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। এদিকে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু না হলেও রাশিয়ান ঋণের টাকার কিস্তি দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
পিডিবি যা বলছে
এদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেতে শুধু গ্রিডলাইন ছাড়াও রয়েছে নানা কারিগরি সংকট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পিডিবি বলেছে, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে সিনক্রোনাইজের সময় প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন স্পিনিং রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, স্পিনিং রিজার্ভ হলো বিদ্যুতের এমন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যাতে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন হঠাৎ কমে গেলেও গ্রিড ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি না হয়। যার মধ্যে প্রায় ৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রায় ১৬০ এমএমসিএফডি গ্যাস রিজার্ভ থাকা জরুরি।
একই বৈঠকে পিজিসিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের পাওয়ার সিস্টেমে সংযুক্তিকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো, সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি স্থিতিশীল ও জাতীয় গ্রিডের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা। এ দুটো নিশ্চিত না করে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাবে না। পিজিসিবি বলেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, ও টারশিয়ারি ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোলের জন্য কী পরিমাণ স্পিনিং রিজার্ভ প্রয়োজন হবে এ বিষয়ে রুশ পরামর্শক জেএসসি এসটিসি ইউপিএস স্টাডি করছে। পরামর্শক সংস্থা কর্তৃক ‘ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল ইন দি বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম’ শীর্ষক প্রতিবদেনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোলের জন্য স্পিনিং রিজার্ভ ১২শ মেগাওয়াট করে ২৪শ মেগাওয়াট স্পিনিং রিজার্ভের সুপারিশ করেছে।
এ ছাড়া জাইকা কর্তৃক সম্পাদিত ‘ওয়াইড এরিয়া ব্লাকআউট প্রিভেনশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ফ্রিকোয়েন্স স্ট্যাবিলিটির জন্য প্রাইমারি স্পিনিং রিজার্ভের পরিমাণ সিস্টেমের সবচেয়ে বড় ইউনিটের ক্ষমতা যোগ ৬ শতাংশ সিস্টেম লোডের সমপরিমাণ রাখার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হিসাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিবেচনায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট সিস্টেম ডিমান্ডের জন্য ১৬৫০ মেগাওয়াট স্পিনিং রিজার্ভের প্রয়োজন হবে বলে সংস্থাটি জানায়।
এফজিএমওভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভাব
এ ছাড়া জাতীয় গ্রিডের সুরক্ষায় দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকেও সঞ্চালন লাইনে ফ্রি গভর্নিং মুড অব অপারেশনের (এফজিএমও) আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে এফজিএমওভুক্ত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা পুরনো। তবে সেটা এখনও অত্যন্ত কমসংখ্যক বাস্তবায়ন হয়েছে। এফজিএমও পদ্ধতিতে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা করা হয়। এ পদ্ধতিতে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। এর ফলে সারাদেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে না। বর্তমানে এফজিএমও পরিচালনায় সক্ষম ২৯টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (নেট সক্ষমতা ৭৩১৪ মেগাওয়াট) থেকে স্পিনিং রিজার্ভ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট। এসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করে কমপক্ষে ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট স্পিনিং রিজার্ভ নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে পিডিবি ও পেট্রোবাংলার মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।
বিদ্যুৎ বিভাগের অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো (নেট ক্ষমতা ৫৬০৩ মেগাওয়াট ১৪৯৬ মেগাওয়াট আমদানি থেকে প্রাইমারি কন্ট্রোল ৩৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট স্পিনিং রিজার্ভ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিভাগকে পিডিবি জানয়েছে, বাংলাদেশ পাওয়ার স্টিস্টেম রিলায়বিলিটি অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইম্প্রভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় আরও ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এফজিএমওভুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে যেগুলো থেকে ১০ শতাংশ হারে স্পিনিং রিজার্ভ পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
প্রাইমারি ফ্রিকোয়েন্সি বা এফজিএমও পদ্ধতিতে গ্যাস টারবাইনের রেসপন্স খুব দ্রুত পাওয়া যায়। সেই প্রেক্ষিতে স্পিনিং রিজার্ভের অধিকাংশ পরিমাণ (৭০০-৮০০ মেগাওয়াট) যেন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে সিস্টেম সংযুক্ত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাস (১৪৫০ থেকে ১৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) সরবরাহের সংস্থান রাখার জন্য পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করার কথা বলা হয়েছে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে দেশে গ্যাসের প্রচণ্ড সংকট চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা।
সামগ্রিক বিষয়ে রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হাসান বলেন, এখন মূলত প্রকল্পটি উৎপাদনে আসা নির্ভর করে সঞ্চালন ও গ্রিডলাইন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ওপর। তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মূল কাজ শেষের দিকে। গ্রিডলাইন নির্মাণকাজ শেষ হলে ফুয়েল লোড করা হবে। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা একটি পরিকল্পনা রেখেছিলাম চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্টার্ট আপ করার। ফুয়েল লোড করার। তবে সব কিছুই মূলত নির্ভর করছে গ্রিডলাইন সঞ্চালনব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার ওপর।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সেটা বাদ করে দেয়। সেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘ ৬০ বছর পর বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ?রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেছে রাশিয়া। পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে ইতোমধ্যেই য্ক্তু হয়েছে বাংলাদেশ।