তিন মোড়লের নতুন টেস্ট চিন্তার বিরুদ্ধে কিংবদন্তিরা

স্পোর্টস ডেস্ক
০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪:১৪
শেয়ার :
তিন মোড়লের নতুন টেস্ট চিন্তার বিরুদ্ধে কিংবদন্তিরা

টেস্ট ক্রিকেটকে দুই স্তরবিশিষ্ট করে চালু করার ভাবনায় আছে ‘বিগ থ্রি’ বা তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। যেখানে প্রথম সারির দলগুলোকে একসাথে রেখে বাকি দলগুলোকে নিয়ে আলাদা স্তর করে টেস্টের নতুন নিয়ম চাইছে তারা। যদিও আইসিসি এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানায়নি। তবে এরকম চিন্তার বিপক্ষে মত দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার গ্রায়েম স্মিথ, শ্রীলংকার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড।

মূলত টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে বেশি ম্যাচ খেলার চিন্তা করছে। সেসব ম্যাচকে ঘিরে দর্শকদের চাহিদা, আগ্রহ তুঙ্গে থাকবে, যেখানে বাণিজ্যিকভাবেই লাভবান হওয়া যাবে।

তবে এর বিরোধীতা করে সম্প্রতি স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেট পডকাস্টে স্মিথ বলেন, ‘পরের চক্রে ইংল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কতবার মুখোমুখি হবে, তা নিয়ে আজ সকালে আমি একটা নোট দেখলাম। অন্য দেশগুলোর জন্য খুবই কঠিন হয়ে যাবে। বাণিজ্যিক কারণেই তো সবাই ভারতের সঙ্গে খেলতে চায়। আপনি আর কোথায় এমনটা দেখবেন যে শীর্ষ তিন দল শুধু পরস্পরের বিপক্ষে খেলছে? চিন্তা করতে পারেন, পরের এফটিপির (ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা) চেহারা কেমন হবে।’

স্মিথ মনে করেন, এর চেয়ে বরং কম শক্তিশালী দলগুলোকে বেশি শক্তিশালী করার মাধ্যমেই উন্নতি সাধন করা যাবে। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট–বিশ্বের দরকার হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্তিশালী করা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শক্তিশালী করা, শ্রীলঙ্কাকে শক্তিশালী করা। নইলে কী যে হবে!’

দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের ঘোর বিরোধী অর্জুনা রানাতুঙ্গাও। বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করেই রানাতুঙ্গা মনে করেন, খেলাকে বাঁচিয়ে রাখাটা বেশি জরুরি, কেবল অর্থ উপার্জন নয়। রানাতুঙ্গা বলেন, ‘অর্থনীতির ব্যাপারটা আমি বুঝি। এমন কিছু হলে ওই তিন বোর্ডের কোষাগার ফুলেফেঁপে উঠবে ঠিকই, কিন্তু খেলাধুলা তো শুধু পাউন্ড, ডলার আর রুপির বিষয় নয়। প্রশাসকদের দরকার খেলাটিকে পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে রাখা, শুধু নিজেদের থলে ভরা নয়।’

গ্যাবা টেস্টে শামার জোসেফের বীরত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে রানাতুঙ্গা জানান, ‘গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে হারানোটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই ছেলেটা (জোসেফ) অসাধারণ খেলেছে। আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকেরাও প্রশংসা করেছে তরুণ এই প্রতিভার। আপনি অন্য দেশগুলোকে বাদ দিয়ে কেন এমন খেলোয়াড়দের বঞ্চিত করবেন?’

ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ভারতকেই আরও একবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন রানাতুঙ্গা, ‘ক্রিকেট বিশ্বকে এই পর্যায়ে আনতে ভারত সব সময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। জগমোহন ডালমিয়া, রাজ সিং দুঙ্গারপুর, শারদ পাওয়ার ও শশাঙ্ক মনোহরদের মনে ভারতের স্বার্থটা সবার ওপরে থাকলেও তাঁরা বৃহৎ পরিসরে ভাবতে পারতেন। এখনও ভারতের কাছ থেকে তেমন কিছুই প্রত্যাশা করি, এখনকার মতো স্বার্থবাদী কিছু নয়।’

এদিকে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড কিছুদিন আগে জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয়, যে সব দেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করেছে, তাদের জন্য ভয়ঙ্কর হবে বিষয়টি (দ্বি-স্তর টেস্ট)। এতে তারা নিচের স্তরে নিজেদের মধ্যে খেলবে। কীভাবে তারা উন্নতি করবে? (তারা উন্নতি করবে) যখন তারা শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে খেলবে।’