কামিন্স কি অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন?
আধুনিক যুগের সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় নিজেকে আজ আরও মহিমান্বিত করলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার প্যাট কামিন্স। ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ‘বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি’ জিতে নিজের সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত করলেন তিনি। কামিন্সের হাত ধরে প্রায় ১০ বছর পরে সোনায় মোড়ানো ট্রফিটি ফিরল অস্ট্রেলিয়ার ঘরে। একইসঙ্গে নিশ্চিত হয়েছে ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫ চক্র’-এর ফাইনালও।
কামিন্সের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য নতুন কিছু নয়। এরই মধ্যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো দুইটি মেজর ট্রফি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। দলকে শুধু নেতৃত্ব দেওয়াতেই কামিন্সের মুন্সিয়ানা সীমাবদ্ধ নেই, বরং নিজের পারফরম্যান্সেও তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন।
সদ্য সমাপ্ত বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২১.৩৬ গড়ে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট নিয়েছেন কামিন্স। এর মধ্যে একবার ইনিংসে ৫ উইকেটও নিয়েছেন। নিজের মূল কাজ বল হাতেই নয়, কামিন্সের দ্যুতি দেখা গেছে ব্যাটেও। সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ ১৫৯ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বক্সিং ডে টেস্টের দুই ইনিংসে ৪৯ ও ৪১ রানের ইনিংসও আছে। ৩১ বছর বয়সী এই তারকার কৌশল, টানা ‘হিট-দ্য-ডেক’ বোলিং ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খেলা ইনিংসগুলো ছিল ব্যবধান গড়ে দেওয়া।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের দায়িত্ব নেন কামিন্স। আর ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্বভার ওঠে পরের বছর। বিশ্বকাপ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও এবারের বর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ ছাড়াও ক্রিকেটের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী লড়াই অ্যাশেজেও দারুণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন কামিন্স। যুক্তরাজ্যের মাটিতে সিরিজ ড্র করেছেন ২-২ সমতায়। ফলে অ্যাশেজ থাকে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাবিনেটেই। সেই অ্যাশেজে চতুর্থ সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট শিকার করেন কামিন্স। ৯১ রানে ৬ উইকেট ছিল সবচেয়ে সেরা বোলিং। সিরিজে মহাগুরুত্বপূর্ণ ১৬২ রানও এসেছে কামিন্সের ব্যাটে। ২৩.১৪ গড় ও সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন কামিন্স। লোয়ার অর্ডারে এমন রান অস্ট্রেলিয়ার জন্য অমূল্য।
---দলের সঙ্গে কামিন্সের সেলফি। ছবি: কামিন্সের ফেসবুক প্রোফাইল
ভারতের বিপক্ষে এর আগের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দুই ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন কামিন্স। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে ৮৩ রানের বিনিময়ে নেন ৩ উইকেট। যার মধ্যে রোহিত শর্মা আর আজিঙ্কা রাহানের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটও ছিল।
২০২৩ সালের শেষদিকে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৩৪.৩৩ গড়ে কামিন্স শিকার করেছেন ১৫ উইকেট। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে মাত্র ৩৪ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে আবারও কামিন্স ঝলক। ৩২ গড়ে ১২৮ রান আসে অধিনায়কের ব্যাটে। এর মধ্যে ৩৭ রানের ইনিংসও ছিল। এর মধ্যে আছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ বলে অপরাজিত ১২ রানের সেই বিখ্যাত ইনিংসও। অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলে যেই ম্যাচে ম্যাক্সওয়েল বাঁচিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। সেখানে কামিন্সের অবদানও ভোলার সুযোগ নেই।
এবার বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে আবারও নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করলেন কামিন্স। বিপদের সময় যে অস্ট্রেলিয়ার তাকেই প্রয়োজন, সেটিই বুঝিয়ে দিলেন। দরকারের সময় এনে দিয়েছেন উইকেট, বিপদে পড়লে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েছেন ঢাল হয়ে। আবার দলের কারো হয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে কিংবা কাউকে সাহস দেওয়ার ক্ষেত্রেও সবার আগে পাওয়া যায় তাকে।
কামিন্স কি এখনো অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরাদের একজন নন?