স্কুলে স্কুলে পৌঁছেছে মাত্র ১৫ শতাংশ পাঠ্যবই

এম এইচ রবিন
০২ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
স্কুলে স্কুলে পৌঁছেছে মাত্র ১৫ শতাংশ পাঠ্যবই

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬২ শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপার কাজ এখনও চলমান। ৩১ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছাপা শেষ হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৬ লাখ। এসব বই বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছে। সেই হিসাবে মোট পাঠ্যবইয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৮৫ শতাংশ বই কবে ছাপা ও সরবরাহ শেষ হবে, খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। গতকাল বুধবার শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি/দুটি করে নতুন পাঠ্যবই। আবার কোথাও কোথাও পাঠ্যবই না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। এদিন নতুন বই পেয়েছে যেসব শিক্ষার্থী, তাদের মুখে হাসি ফুটলেও যারা পায়নি তাদের মলিন বদনে ফিরে যেতে হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন খারাপের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

এদিকে বই স্কুলে পৌঁছতেই এবারও ‘ভুল’ নিয়ে শুরু হয়ে গেছে সমালোচনা। অন্যদিকে বছরের প্রথম দিন মাত্র ছয় কোটি বই দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩৪ কোটি বই দিতে ফেব্রুয়ারি মাস পার হয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তাই পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যাবে।

দুঃখ প্রকাশ করে উপদেষ্টা যা বললেন

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গতকাল বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই না পৌঁছানোয় দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অনেক দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। কবে নাগাদ বই পাওয়া যাবে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, ১৫ জানুয়ারির কথা। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেব না।

পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে- এই বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, বই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। ছাপার প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে কিছু কথা বলব। আমি মনে করি, পাঠ্যবই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন- প্রথম সমস্যাটা হলো, আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে, তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে।

পরিমার্জন বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতি-নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

বই ছাপার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন- শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সে জন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নতমানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘কাগজের মান ঠিক রাখা এবং আমাদের বই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে যাতে নোট বইয়ের ছাপার কাজ না হয়, সে বিষয় তদারকির জন্য ঢাকার শিক্ষকদের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার টিমের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, বই ছাপানোর কাজে পদে পদে ষড়যন্ত্র ছিল, যা অতিক্রম করা হয়েছে। আজও কোনো কোনো জেলায় ষড়যন্ত্র করে বই আটকে রাখা হয়েছিল। বই ছাপানোর কাজে অনেক প্রেসের মালিক, কাগজ উৎপাদনকারী সংস্থা কম মূল্যে কাগজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। এখনই সব বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছাতে না পেরে আমি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অভিভাবকদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।

ছাপা পাঠ্যবইয়ে ভুল নাম, অনলাইনে ঠিক : পাঠ্যবইয়ে এবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে গল্প-কবিতা ও প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে একটি গল্প রাখা হয়েছে। সেখানে শহীদ তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ভাষা সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নাম রাখা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের নামও। গল্পের শেষে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নাম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মীর মুগ্ধের ত্যাগের গল্পও। গল্পটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট পাঁচজন শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাফিজ, নাহিয়ান ও আনাস। তাদের মধ্যে নাহিয়ান নামে কোনো শহীদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এদিকে নাহিয়ান নামটি ভুল করে লেখা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরপর পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনে নাহিয়ানের স্থলে নাফিসার নাম যুক্ত করা হয়েছে। তবে যেসব বই ছাপা হয়ে গেছে, সেগুলোতে ভুল নামটি থেকে গেছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, শহীদদের মধ্যে একজন নারীর নাম যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তারা টঙ্গীর সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। সাভারে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নাফিসা।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হক বলেন, নামটা ভুল হয়েছিল। আমরা জানতে পেরে সেটা ঠিক করেছি। পঞ্চম শ্রেণির খুব বেশি বই ছাপা হয়নি। পরবর্তীতে যেগুলো ছাপা হবে, তাতে সঠিক নাম যুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া অনলাইন ভার্সনেও আমরা নামটি ঠিক করে দিয়েছি। আশা করি, এ নিয়ে আর বিভ্রান্তি হবে না।

পরিবর্তিত পাঠ্যবইয়ে থাকছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ৭ মার্চ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যৌক্তিকভাবে তুলে ধরা হবে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে। পাঠ্যবইয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানও থাকছেন যথাযথ মর্যাদায়। থাকছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চও। বাদ যাচ্ছে না ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু খেতাব পাওয়ার বিষয়টিও। এনসিটিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এ রিয়াজুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু আছেন ৭ মার্চের জায়গায়, উনি বঙ্গবন্ধু হিসেবে আছেন। ১৯৬৯ সালে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেওয়া হয়েছে, সেটাও আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান, ততটুকুই আছে।

তবে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে থাকছেন কিনা, এ বিষয়ে রিয়াজুল হাসান বলেন, জাতির পিতা ব্যবহার করা হয়নি। বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে রাখতে সবাই একমত হননি। তিনি আরও বলেন, এক নেতার এক দেশ- এ ধারণা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা আরও অনেক নেতা রয়েছেন, তাদেরকে রাখা হচ্ছে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদসহ যার যতটুকু আবদান, তা রাখা হচ্ছে। অতিরঞ্জিত ইতিহাস বাদ যাচ্ছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, পাঠ্যবইয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে অতিরঞ্জিত করে কাউকে উপস্থাপন না করে যার যতটুকু অবদান, তাকে ততটুকুই রাখা হচ্ছে। কাউকে খাটো করা হচ্ছে না।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রেক্ষাপটে যাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী চরিত্র মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী ও জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার (পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে।

জিয়াউর রহমানের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাকে বেশি করে দেখানো হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, কারও ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত কিছু থাকছে না। পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের যতটুকু রাখা যায়, ততটুকুই থাকছে।

এ ছাড়া সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদকে।

এদিকে নতুন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের দেয়াল লিখন ও দেয়ালচিত্র। থাকছে ধর্মীয়সহ নীতিবাক্য। পাঠ্যবইয়ে আবু সাঈদের ছবিসহ তার ওপর লেখা যুক্ত করা হচ্ছে।

ইসলাম ধর্মীয় পাঠ্যবইয়ে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ক্যালিওগ্রাফি। অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, পাঠ্যবইয়ে ক্যালিওগ্রাফির ধরনে আল কোরআন ও আল হাদিস থাকছে। এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় পাঠ্যবইয়ে গৌতম বুদ্ধের বাণী, একইভাবে খ্রিস্টান ধর্মের বইতে খ্রিস্টের বাণী ও হিন্দু ধর্মীয় বইয়ে তাদের বাণী থাকছে।

তবে এবারের পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে বেশ কয়েকটি গল্প। নতুন করে কিছু গল্প-কবিতা যুক্ত করা হয়েছে। ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’। ‘গ্রাফিতি’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে কিছু পাঠ্য বাদ যাচ্ছে এবং নতুন করে যুক্তও হচ্ছে কিছু বিষয়। পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে এবং প্রথম দিকে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে।

আমাদের সময়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি : বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পেয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীরা। সকালে উপজেলার সুখনগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম তারতাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ।

নাটোর প্রতিনিধি : বছরের প্রথম দিন নাটোরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ নতুন বই তুলে দেওয়া হলেও নতুন বইয়ের গন্ধ পায়নি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এই দুই শ্রেণির বই অল্প সময়ের মধ্যে আসবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী। বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক পর্যায়ের জেলা পর্যায়ে ৭শ ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাক-প্রাথমিক, এবতেদায়ি এবং কিন্ডারগার্টেন মিলে মোট ৬শ ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ২৯ হাজার লেখার খাতা দেওয়া হয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধি : জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান গতকাল বই বিতরণের উদ্বোধন করেন। ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলায় মোট এক হাজার ৪৭টি প্রাথমিক ও ৩৭১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলায় মোট বইয়ের চাহিদা ১১ লাখ ৯০ হাজার ২৬৭টি বই। যার মধ্যে ৫৯ ভাগ বই বরাদ্দ এসেছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হবে।

ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি। শিক্ষকরা আন্তরিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন।

এর আগে ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক। মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ২৫ হাজার ২৫২। এখানে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৩০ হাজার পিস বই।

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল-লোহাগড়াসহ জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন বছরে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। নববর্ষে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে আনন্দে উদ্বেলিত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টায় নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। এ ছাড়াও নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নড়াইল শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই বিতরণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষার্থীই নতুন বই পায়নি। সরবরাহ না থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। অপরদিকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গায় বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহামদ জহিরুল ইসলাম। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, সপ্তম শ্রেণির তিনটি করে বই তারা হাতে পেয়েছেন। বাকি বই পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দিলআরা চৌধুরী বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি বই ও অন্যান্য শ্রেণির বইগুলো আমরা হাতে পাব। পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীদের হাতে তা তুলে দেওয়া হবে।

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাটে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বছরের বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে একাধারে চকময়রাম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধামইরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সুফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হরিতকি ডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, ধামইরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিতকিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বছরের নতুন বই তুলে দিয়ে তারুণ্যের উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান।