রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ভারসাম্যের সুপারিশ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানপরবর্তী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ৬টি কমিশনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের মতামত গ্রহণ শেষে সুপারিশ প্রণয়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে সরকারের কাছে ৬টি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করেন রাষ্ট্রপতি। সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকলে সেটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যই ভালো। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একটি অংশ বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াহিয়া আখতার বলেন, ক্ষমতা যদি একজনের হাতে বেশি থাকে এবং সেখানে যদি গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকে তাহলে সেটি একনায়কতন্ত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একজনের হাতে যদি বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় তাহলে সেটি অপব্যবহারের শঙ্কাও অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে নভেম্বরে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে কার্যক্রম শুরু করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের মধ্যে পাঁচটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ধাপের পাঁচ কমিশনের প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে জমা হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়। এ ছয় কমিশন ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন ও সুপারিশ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন পেশাজীবী সংগঠন এবং সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। মতবিনিময় শেষে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, তিনি সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার পরামর্শ দিয়েছেন।
কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো লিখিত মতামত জানিয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনাসহ সংবিধানের একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনারও দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রসঙ্গে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন : তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকিলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না। (৫) প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রীয় নীতি সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখিবেন এবং রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করিলে যে কোন বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করিবেন।’