এক বছরে দুই শিক্ষাক্রম
বছরের শুরুতে নতুন কারিকুলাম নিয়ে হৈ চৈ এবং তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকার। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই কারিকুলাম বাতিল করে পুরনো ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বছরের আট মাস নতুন শিক্ষাক্রম পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হয় আগের নিয়মে (সৃজনশীল)। এক বছরে দুই কারিকুলামে লেখাপড়া মানিয়ে নিতে চরম বিপাকে পড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
নানা ইস্যুতে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল শিক্ষা খাত। নতুন শিক্ষাক্রমে ‘শরীফ থেকে শরীফা গল্প’ নিয়ে ছিল তুমুল বিতর্ক। বৈষম্যহীন কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে জুনের প্রথমার্ধ থেকে উত্তাল ছিল সব বিশ্ববিদ্যালয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা দাবিতে যুক্ত হন। বিশ্বে বিস্ময় জাগানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন তরুণরা। বহু ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন শিক্ষার্থীরাই। স্বাভাবিকভাবে আলোচিত বহু ঘটনার কেন্দ্রে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন এবং গণ-অভ্যুত্থানের বছর ২০২৪। বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক, অনন্য, অসাধারণ, অভূতপূর্ব এক বছর এটি। সর্বজনীন পেনশন বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতিতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা নেমে আসে। পর আগস্ট-পরবর্তী বদলি-পদায়ন নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে তৈরি হয় অস্থিরতা। এইচএসসির আংশিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শিক্ষাঙ্গনে মব জাস্টিসের নামে ‘নৃশংসতা’ ও লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন:
একে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুরোপুরি না হলেও শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে শিক্ষা সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান-সদস্য, মাউশির মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ইউজিসির চেয়ারম্যান-সদস্য, পিএসসির চেয়ারম্যান-সদস্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরে ৫০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ নতুন প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। অসংখ্য কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। ফলে একযোগে শিক্ষা প্রশাসনের সব জায়গায় নতুনরা এসেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে কাঠামোর বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে অসন্তোষ।