একযোগে কয়েক হাজার জনপ্রতিনিধি অপসারণ

শাহজাহান মোল্লা
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শেয়ার :
একযোগে কয়েক হাজার জনপ্রতিনিধি অপসারণ

দেশের শাসনব্যবস্থায় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি স্তরে থাকে জনপ্রতিনিধি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। এসব স্তর জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ২০ আগস্ট থেকে স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থার পাঁচটি স্তরের সব জনপ্রতিনিধিকে একযোগে অপসারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো পরিচালনায় নিয়োগ দেওয়া হয় বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের।

এর মধ্যে ১২টি সিটি করপোরেশনের বসানো হয় প্রশাসক। অন্য বিভাগগুলোতেও সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে সব জনপ্রতিনিধি অপসারণের নজির দেশের ইতিহাসে নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে, স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থায় বড় ধসের বছর ছিল ২০২৪ সাল।

স্থানীয় সরকার কাঠামো: গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলকে ভাগ করে সাজানো হয় স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থা। গ্রামের মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা পরিষদ। আর শহরাঞ্চলে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। দেশের সব নাগরিকের সেবা দিয়ে থাকে এই স্থানীয় সরকার কাঠামো। জন্ম ও মৃত্যুসনদ থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স, ভবন নির্মাণসহ সবকিছু হয়ে থাকে স্থানীয় সরকার কাঠামোর মাধ্যমে। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, শহরের রাস্তা-ফুটপাতের উন্নয়নও নির্ভর করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ওপর। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচাইতে বড় কর্মপরিধির মন্ত্রণালয় এটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই স্থানীয় সরকার প্রশাসনের পাঁচটি স্তরে কয়েক হাজার জনপ্রতিনিধিকে একযোগে অপসারণ করে। বর্তমানে সারাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ, ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১টি জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আর খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি এই তিনটি জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ ছাড়া ৩২৭টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জনপ্রতিনিধি অপসারণ করে আমলাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এতে নাগরিকসেবা ব্যাহতের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। থমকে গেছে স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে ঢিমেতালে চলতে থাকা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বছরের শেষদিকে এসে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া বিদায়ী বছরের শুরুর দিকে অনেকগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এতে বছরের শুরুতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চাঙ্গা হওয়ার পর মাঝামাঝিতে এসে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে বছরের শেষদিকে এসে অন্তর্বর্তী সরকার এই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে গত ২৫ ডিসেম্বর দিনগত রাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে আরেক দফা ধাক্কা খায় এই মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘোষণা দিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজই পড়ে থাকবে না। তিনি এখন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অফিস করবেন। স্থানীয় সরকার কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বছরে নতুন ভোরের প্রত্যাশায় স্থানীয় সরকার প্রশাসন ব্যবস্থা। ২০২৫ সালে জনপ্রতিনিধিনির্ভর প্রশাসন ব্যবস্থা ফিরে আসবে- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।